আইসিডিগামী কনটেইনারের জট কমাতে বিকল্প উদ্যোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম বন্দরে লেগেছে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারের জট। ঈদের সময় কয়েকদিন ট্রেনযোগে পরিবহন বন্ধ থাকা এবং সম্প্রতি কমলাপুর আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের আগ্রহ বাড়ায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় জট কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনার বন্দর থেকেই খালাসের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে ৮৭৬ টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভেলেন্ট ইউনিটস) কনটেইনার রাখার স্থান রয়েছে। কিন্তু ঈদের পর কনটেইনার একপর্যায়ে দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এখন পর্যন্ত সেই জট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে কমলাপুরগামী ১২০০ টিইইউএস আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার ছিল। যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি নিতে না পারায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের বাড়তি সময় অবস্থানে আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে ডেমারেজ। এছাড়া যথাসময়ে পণ্য হাতে না পাওয়ায় তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। এ অবস্থায় জট কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনার বন্দর থেকেই খালাসের অনুমতি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সিংহভাগ কনটেইনার সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু কনটেইনার রেলযোগে কমলাপুর আইসিডিতে এবং কিছু জাহাজযোগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে নিয়ে সেখান থেকে ডেলিভারি নেয়া হয়। কনটেইনারের চাপ বাড়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ ২৬ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, ঢাকার কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারগুলো বন্দরের প্রচলিত নিয়মমাফিক রেলযোগে ঢাকা পাঠানোর কাজটি যৌথভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মে মাসের প্রথমদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং এরপর রমজানের ঈদ উপলক্ষে জনস্বার্থে যাত্রীসেবার জন্য প্যাসেঞ্জার ট্রেন প্রাধান্য দেয়ায় চট্টগ্রাম প্রান্তে বেশকিছু কনটেইনার জমা হয়েছে। তাই দ্রুত ডেলিভারির স্বার্থে আমদানিকারকরা চাইলে তাদের নিজস্ব কনটেইনার কাস্টম আইজিএম সংশোধন করে ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকে ডেলিভারি নিতে পারবেন। এছাড়া আমদানিকারকরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে শিপিং এজেন্টের দায়-দায়িত্বে অন-চেসিসে সড়কপথে কিংবা পানগাঁও আইসিটির মাধ্যমে জাহাজযোগেও ঢাকা আইসিডিতে পরিবহন করতে পারবেন।

ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম  বলেন, একসময় রেলপথে কনটেইনার পরিবহনে আমদানিকারকদের আগ্রহ কম ছিল। এখন বেড়েছে। চাপ কমাতে আমদানিকারকদের আমরা কিছু বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ করে দিয়েছি। আশা করছি, কাস্টম সংক্রান্ত কাজকর্ম শেষ করে দু-একদিনের মধ্যে তারা বিকল্প ব্যবস্থায় কনটেইনার নেয়া শুরু করতে পারবেন। তিনি জানান, বন্দরে কমলাপুর আইসিডিগামী প্রায় ১২০০ কনটেইনার রয়েছে। রেলওয়ে প্রতিদিন ১০০টি করে কনটেইনার পরিবহন করতে পারছে। যদিও অতীতে বিভিন্ন সময় এর চেয়ে বেশি কনটেইনারও রেলওয়ে পরিবহন করেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কম সময়ে ও কম খরচে কনটেইনার ডেলিভারি নেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কমলাপুর থেকে ডেলিভারি নেয়ার আগ্রহ বাড়ার বিষয়টিকে অনেকে ভিন্ন চোখেও দেখছেন। এক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কোনো চেষ্টা আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (সিএন্ডএফ) যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বন্দর থেকে রেলপথে কমলাপুর পর্যন্ত কনটেইনার যেতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগে যে পরিমাণ কনটেইনার কমলাপুর যেত, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি যাচ্ছে। কে আগে কনটেইনার নিয়ে যেতে পারে, সেটা নিয়ে একধরনের তদবির শুরু হয়েছে। কিন্তু বন্দর তাদের নিজেদের মতো করেই কমলাপুরে পাঠাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হল- চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে সবচেয়ে কম খরচে ও কম সময়ে পণ্য ছাড় করা যায়, সেখানে আমদানিকারকরা এমন অনেক পণ্য কমলাপুর নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, যা আগে চট্টগ্রাম বন্দরেই ছাড় হতো। আমাদের ধারণা, বন্দরে হয়তো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্ক আহরণে কড়াকড়ি করছে। এ কারণে অনেক বেশি কনটেইনার কমলাপুর যাচ্ছে কি না- এটাও ভেবে দেখা দরকার।