আইসিটি খাতে কারখানা করলে অগ্রাধিকার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যেসব কোম্পানি দেশে কারখানা করবে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশে কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা করবে না, তাদের প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যেগুলো সস্তায় বাহির হতে নিয়ে আসা যাবে, সেগুলো নিয়ে আসা হবে। কিন্তু যারা এখানে তৈরি করার জন্য ঐ মানসিকতা নিয়ে আসবে তাদের প্রেফারেন্স দেয়া হবে। দেশের কোষাগারে কতখানি রেভিনিউ আসবে তার চেয়ে কর্মসংস্থানের দাম বেশি।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে এই সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব  নূর-উর-রহমান।

আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, ফাইভজির যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখেছে সেটি স্বপ্ন হবে না, সেটি শিগগিরই বাস্তবে পরিণত হবে। এখন সামনে চতুর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন, এটি অনেক ব্যাপক। প্রথম শিল্প বিপ্লব ফেল করেছি, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবেও বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তৃতীয়টি চলমান, এখানে মোটামুটি কিছু কিছু যুক্ত হওয়া গেছে।

‘কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নলেজ বেইজ ট্রান্স-ফরম্যাশন। এতে রুপান্তরিত শিল্প কারখানা, প্রসেস প্রযুক্তি সবকিছুতে পরিবর্তন আসবে। এগুলো হবে ন্যানো টেকনোলজিতে, ফিনটেক, রোবটিক্স, আইওটি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, এআইসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিতে’ বলছিলেন মন্ত্রী।

এগুলো ব্যবহারে তৈরি হওয়ার আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, একদিকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে অন্যদিকে বাস্তবায়িত করতে হবে। দেশের যুব সমাজ তরুণ সমাজ বুদ্ধিদীপ্ত, তারা ফেইল করবে না। এই চতুথ বিপ্লব বাংলাদেশের জন্যই এসেছে, এর থেকে অনেক বেশি সফলতা পাবো।

তিনি বলেন, এখন গার্মেন্টস শিল্প দেশের রপ্তানির চালিকা শক্তি। কিন্তু এই শিল্প সারা বিশ্বে ১ ট্রিয়লন ডলারের নীচে, ৯০০ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। আর আইটির বার্ষিক চাহিদা ২০২০ সালেই ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এখানে গার্মেন্টস  শিল্প হতে বেশি সফলতা দেখানো যাবে। এখানে বিনিয়োগ কম লাগবে ও মস্তিস্কের ব্যবহার বেশি করতে হবে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দকে সারা পৃথিবী বিপ্লবের শব্দে পরিণত করেছে। বৃটেন, ভারত, মালদ্বীপ,পাকিস্তানসহ সবাই ডিজিটাল বাংলাদেশকে দেখে নতুন রূপান্তরের পথে যাচ্ছে।

‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রযুক্তির মহাসড়ক’ মূল প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এই মেলা শুরু হয়েছিলো ১৬ জানুয়ারি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এই আয়োজনে  সহযোগিতায় ছিলো বিটিআরসি, বিটিসিএল, টেলিটক, বিএসসিসিএল, বিসিএসসিএল, ডাক বিভাগ ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠন আইএসপিএবি।

মেলায় বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ও আইএসপিসহ ৮২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল প্লে (এক ক্যাবলে ল্যান্ডফোনের লাইন, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ), মোবাইল অ্যাপস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়েছে।ওয়ালটন, স্যামসাং, সিম্ফনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য দেখিয়েছে, দেশী সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করেছে।

এছাড়া মোবালই অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা (ভ্যাস) দেখিয়েছে। জেডটিই, হুয়াওয়ে, নকিয়া, এরিকসন ফাইভজি ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে, তারা লাইভ অনুষ্ঠানসহ এর ব্যবহার উপযোগিতা ‍তুলে ধরেছে।

মেলায় শিশুদের প্রোগ্রামিং ও রোবটিক্স শিক্ষা নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে, টেলিমেডিসিন ও টেলিকম বিভাগের প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবা দেখিয়েছে।

অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিজিটাল উদ্যোক্তা সম্মেলন, রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা।  ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদানের জন্য ১৪টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

মেলায় ১৩টি সেমিনারে সরকারের মন্ত্রী, দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ বক্তারা বর্তমানের প্রযুক্তি ও আগামী দিনে প্রযুক্তির গন্তব্য নিয়ে বলেছেন। আলোচনা করেছেন  ট্যালেন্ট গ্যাপ, ডিজিটাল অর্থনীতি, ডিজিটাল গ্রোথ, স্মার্ট সিটি, এসডিজির অ্যাচিভমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে।

ছিলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃথক কর্নার। সেই কর্নারে প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা হয়েছে।