আইএসের ওপর ‘প্রতিশোধ’ নিলেন বাইডেন

আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অবস্থান লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, এই হামলায় আইএস খোরাসানের (আইএস-কে) হাই প্রফাইলের দুই নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো একজন। কাবুলে আত্মঘাতী হামলার পেছনে এদের হাত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কাবুলের ঘটনার প্রতিশোধের ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পর এই ড্রোন হামলা চালানো হলো।

এদিকে তালেবান জানিয়েছে, দেশ পরিচালনার জন্য আপাতত তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেখানে আফগানিস্তানের সব জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

কাবুল বিমানবন্দরে আবারও বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুল বিমানবন্দরের আবি ফটকে আত্মঘাতী হামলা চালায় ইসলামিক স্টেটের আফগানিস্তান শাখা (আইএস-কে)। ওই হামলায় অন্তত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ১৩ সদস্যও রয়েছেন। হামলার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেন, হামলাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তাঁর এই ঘোষণার পরের দিনই আফগানিস্তানে আইএসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নানগারহার প্রদেশে ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী।

পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ ফর রিজিওনাল অপারেশনসের ডেপুটি ডিরেক্টর মেজর জেনারেল হ্যাংক টেলর গতকাল ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ড্রোন হামলায় জঙ্গিরা নিহত হলেও কোনো বেসামরিক লোক হতাহত হয়নি। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘নিহতরা আইএস-কের পরিকল্পনাকারী ও সমর্থক। এই দুজন পৃথিবীর বুকে আর হাঁটছেন না, এটাই ভালো খবর।’

এর আগে গতকাল মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, যাকে যাকে লক্ষ্য করে আমরা ড্রোন হামলা চালিয়েছি, তারা নিহত হয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি রিপার ড্রোন দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। হামলার সময় আইএসের ওই সদস্য আরেক সহযোগীসহ গাড়িতে ছিল। হামলায় দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

এদিকে তালেবান আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এ হামলাকে ‘আফগানিস্তানের ভূখণ্ডের ওপর স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তালেবান। এর পর থেকেই নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা। কিন্তু সরকারের রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেননি তাঁরা। এ অবস্থায় গতকাল একাধিক তালেবান নেতার বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, তারা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। এতে আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। তবে এই সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আফগান রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জাতিগত বৈচিত্র্য। রাজনৈতিক অস্থিরতাও এই বৈচিত্র্যের কারণেই। চার কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে কোনো জাতিগোষ্ঠীই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পশতুন জনগোষ্ঠীর মানুষ (৪২ শতাংশ)। অষ্টাদশ শতক থেকে আফগান রাজনীতিতে তাদের প্রভাব তুলনামূলক বেশি।

তালেবানের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন একজন ‘আমির উল মুমিনিন’। এরই মধ্যে একটি সুপ্রিম লিডারশিপ কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ সরকারের ধরন কী হবে, কারা কারা মন্ত্রী হবেন—সেসব সিদ্ধান্ত এই কাউন্সিল থেকেই নেওয়া হবে।

তালেবানের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নতুন সরকারে তাজিক ও উজবেক ?উপজাতি নেতাদের সন্তানদের রাখা হতে পারে। এ ছাড়া পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের প্রতিনিধিদেরও যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রাখা হয়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তালেবান নেতারা। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের সাবেক প্রধান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকেও নতুন সরকারে দেখা যেতে পারে।

গতকাল হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন পিসাকি বলেছেন, নতুন আফগান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো তাড়াহুড়া করবে না। এ ছাড়া তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় আফগানিস্তানে মার্কিন কূটনীতিকদের উপস্থিতি থাকবে কি না, সে বিষয়েও এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাইডেন প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের এক লাখের বেশি সামরিক-বেসামরিক লোকজন আফগানিস্তান ছেড়েছে। গতকাল শুক্রবার আফগানিস্তান ছাড়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বে ৩১ আগস্টের মধ্যে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ