অ্যাকর্ডকে রাখার পক্ষে তৎপর ইউরোপীয়রা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

অগ্নি ও ভবন সুরক্ষায় তদারকির দায়িত্ব ‘অ্যাকর্ডের’ (অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি) কাছে রাখতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ইউরোপীয়রা। গত নভেম্বর মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়াতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের অনেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধার সঙ্গে অ্যাকর্ডকে এ দেশে কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

তবে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের তৈরি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্টরা মনে করে, তদারকির মতো সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। তাই এখন আর বাইরের তদারকির প্রয়োজন নেই। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত অ্যাকর্ডকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সেদিনই এই ইস্যুতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম গত বছরই গুটিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। তবে অ্যাকর্ডকে বাংলাদেশে কাজ চালিয়ে যেতে দিতে বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা আহ্বান জানিয়ে আসছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মূলত ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এ দেশে তাদের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে ইউরোপের বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

এদিকে বৈশ্বিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়ন গত মাসেও এক বিবৃতিতে আদালতের বাইরে বিষয়টি সুরাহা করে অ্যাকর্ডকে বাংলাদেশে কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

২০১৩ সালে ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর দেশে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেন। ২০১৩ সালের ১৫ মে ইউরোপভিত্তিক বৈশ্বিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক সংগঠনগুলো পাঁচ বছর মেয়াদি ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক চুক্তি সই করে। গত বছরের মে মাসে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশকে না জানিয়ে তারা নিজেরাই আবার একটি ‘ট্রানজিশন অ্যাকর্ড’ চুক্তি সই করে। কিন্তু বাংলাদেশ তাতে সম্মত হয়নি।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রেতাদের দিক থেকে যে সমর্থন পাওয়ার কথা ছিল সেটি আমরা পেয়েছি। এর ফলে আমাদের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের নিজেদের কারখানার তদারকি নিজেদেরই করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিজিএমএই ও সরকার সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।’

বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্সের তদারকির ফলে বড় কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশ উন্নত হলেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হারিয়ে যেতে হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ শ কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। অ্যালায়েন্স ইতিমধ্যে বাংলাদেশে তার কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে।