অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সরকারি কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ সফরের কারণে অর্থের অপচয়ের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। খোদ প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত বিদেশ সফর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা যেন অহেতুক বিদেশ সফর না করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার এই নির্দেশনা কতটা পালিত হচ্ছে তা অনুধাবন করা যায় গতকাল ও গত পরশু যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে।

গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বন্যা ও অতিবর্ষণে ভাঙা পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফরের জন্য থোক বরাদ্দ থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিতে এই অর্থে বিদেশ যাবেন কর্মকর্তারা। গত পরশু যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে, পুকুর ও খাল উন্নয়ন শিখতে বিদেশ সফরে যাবেন ১০০ কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণের নামে এ সফর বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বস্তুত অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে অথবা অন্যান্য অজুহাতে হামেশাই সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করছেন। জানা যায়, কে কখন কী কাজে কতবার বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সংরক্ষিত না থাকায় একজন কর্মকর্তা ঘন ঘন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান। আবার অনেকে বছরে একবারও সুযোগ পান না। অভিযোগ আছে, অনেকে তথ্য গোপন করে বারবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ নেন।

সাধারণত প্রশিক্ষণ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনার জন্য কর্মকর্তারা বিদেশে যান। প্রকল্প বাস্তবায়নে বাস্তব শিক্ষালাভের জন্যও বিদেশ যান অনেকে। আবার অতি সাধারণ কাজেও দলবেঁধে বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা রয়েছে।

প্রশ্ন হল, কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের কতটা সুফল পায় রাষ্ট্র? জানা যায়, কর্মকর্তাদের যথেচ্ছ বিদেশ ভ্রমণের মারাত্মক প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে। তাছাড়া অনেকে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন যে মন্ত্রণালয়ের জন্য, দেশে ফেরার পর তাদের সেখান থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ারও নজির আছে। সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান সরকারের কোনো কাজে লাগে না। এভাবেই সরকারি অর্থের অপচয় হয়।

এর মানে এই নয় যে, সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে যাবেন না।

অত্যাবশ্যকীয় কাজে, প্রশিক্ষণের জন্য, বিশেষ কোনো বিষয়ে কারিগরি বা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান আহরণে অথবা কোনো কিছু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর করার বিষয়টি যৌক্তিক। তবে প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের বিদেশ সফর হয়ে থাকে অপ্রয়োজনে অথবা অযৌক্তিক কারণে।

আবার অনেক সময় সফরে যাওয়া কর্মকর্তার সংখ্যা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। বস্তুত এসব ঘটনাই জন্ম দেয় প্রশ্নের। তাই আমরা আশা করব, সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হবে।