‘অস্ট্রেলিয়া এখন সবার হাসির খোরাক’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রুডি কোয়ের্তজেন জীবনে এতটা বিস্মিত হননি। রিকি পন্টিংও মনে হয় না কখনো এতটা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। আম্পায়ার ব্যাটসম্যানকে নট আউট বলে দিয়েছেন। বোলার-উইকেটরক্ষক হতাশা নিয়ে তাকিয়ে, এমন অবস্থায় নটআউট ঘোষিত ব্যাটসম্যান ‘ওয়াক’ করছেন! ক্রিকেটে নৈতিকতাকে এতটাই ওপরে স্থান দিতেন, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে নিজে আউট বুঝে ড্রেসিংরুমে ফিরে এসেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। এই ঔদার্য আর সততায় খুশি হতে পারেননি তখনকার অধিনায়ক পন্টিং, সেই ম্যাচে গিলক্রিস্টের পর ব্যাট হাতে নামার সময় যাঁর চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ।

নিজে আউট বুঝলে নিজে থেকে ড্রেসিংরুমে হাঁটা দিতে দুবার ভাবতে হয়নি। তাঁরই উত্তরসূরি স্টিভেন স্মিথরা সেখানে পরিকল্পনা করে বল টেম্পারিং করছেন! এমন ঘটনায় লজ্জিত, অপমানিত গিলক্রিস্ট।
অস্ট্রেলিয়ান ফর্মুলা ওয়ান কভার করছিলেন গিলক্রিস্ট। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে স্মিথ-ব্যানক্রফটরা তখন ন্যক্কারজনক এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। বল টেম্পারিং করেছেন, সেটাও আবার আগে থেকেই পরিকল্পনা করে! গিলক্রিস্টের ধারণা, এতে শুধু বর্তমান দল নয়, অস্ট্রেলিয়ার অতীত সব অর্জন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে এখন, ‘অন্য জিনিসকেও কলুষিত করবে এটা। সবাই এখন অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন তুলবে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট, যা আমাদের অনেক গৌরবের স্থান—সেটা এখন সবার হাসির খোরাক। শুধু তা-ই নয়, মানুষ এখন আমাদের আগের অনেক কীর্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলবে, সন্দেহ করবে।’

গিলক্রিস্টকে সবচেয়ে কষ্ট দিচ্ছে পুরো দল নিয়েই ব্যাপারটাতে জড়িত থাকায়। ব্যানক্রফট যদি মুহূর্তের ভুলে কাজটা করতেন, সে ক্ষেত্রেও হয়তো ব্যাপারটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের খারাপ লাগছে পুরো দল মিলে রীতিমতো ছক কষে বল বিকৃত করেছে! গিলি বলেছেন, ‘আমি সত্যি খুব দুঃখিত, দুঃখিত, স্তব্ধ। শুনলে মনে হতে পারে আমি বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি, কিন্তু এ বিষয়ে আমি আসলেই আবেগপ্রবণ। এটা অবশ্যই ক্রিকেটে বেআইনি এবং আমাদের জাতীয় দলের অধিনায়ক ও জাতীয় দল স্বীকার করেছে তারা আগে পরিকল্পনা করে একসঙ্গে বসেছে, তারপর প্রতারণা করার একটা উপায় খুঁজে বের করেছে।’

এ ঘটনায় এর মধ্যেই ম্যাচের মাঝপথে পদত্যাগ করেছেন স্মিথ ও ওয়ার্নার। গিলক্রিস্ট অবশ্য ঘটনার পরেই বলেছেন স্মিথের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত। তবে এমন সিদ্ধান্ত যে স্মিথ একা নেননি, কোচ ড্যারেন লেম্যানেরও জড়িত থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে গিলক্রিস্টের কথায়, ‘স্মিথ দলের নীতিনির্ধারক অংশের (লিডারশিপ গ্রুপ) কথা বলেছে, দলের সিনিয়ররাও এতে জড়িত। আমি জানি না লিডারশিপ গ্রুপটা কী জিনিস, শুধু অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলে (রাগবি ঘরানার) নির্ধারিত লিডারশিপ গ্রুপ ছিল। আমাদের সময়ে কোচ, অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কই ছিলেন নেতৃত্ব।’

প্রথম আলো