অসহায় মা! ঝগড়ার বলি গর্ভের সন্তান, আরেক সন্তানও মৃত্যুর মুখে

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক নারীর পেটে আট মাস বয়সী সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় ওই মায়ের ১০ বছর বয়সী আরেক সন্তানও মৃত্যুর মুখে। প্রতিপক্ষের মারধরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকার এক হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই কিশোর। অসহায় ওই মায়ের নাম ইনসান খাতুন। তিনি উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের বড়বিশাকোল গ্রামের ইয়াসিন আলীর স্ত্রী। এই ঘটনায় সোমবার বিকালে ভাঙ্গুড়া থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়বিশাকোল গ্রামে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে শাহজাহান আলী ও জাহিদুল ইসলাম গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় উভয়পক্ষের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। একপর্যায়ে এসব জমির বোরো ধান কাটা নিয়ে শনিবার সকালে উভয় গ্রুপের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সে সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যস্থতায় সংঘর্ষ বন্ধ হয়। কিন্তু এরপরে জাহিদুলের লোকজন শাজাহান গ্রুপের সদস্য ইয়াছিন আলীর ১০ বছর বয়সী ছেলে ইমনকে মাঠের মধ্যে একা পেয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। শাহজাহানের গর্ভবতী স্ত্রী ইনসান ছেলেকে রক্ষা করতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকেও মারধর করে। মারধরে ইনসান খাতুনও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। মা ও ছেলের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা পাবনা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পাবনা হাসপাতালে মুমূর্ষু ইনসান খাতুনের গর্ভ থেকে মৃত সন্তান বের করা হয়। এছাড়া তার বড় সন্তান ইমনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন ইমনের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে, এ ঘটনায় শাহজাহান আলী প্রতিপক্ষের জাহিদুল ইসলামসহ ১২ জনকে আসামি করে সোমবার বিকালে ভাঙ্গুড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এর পরপরই জাহিদুল ইসলাম প্রতিপক্ষ শাহজাহান আলীসহ ৮ জনকে আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন।

উপজেলার বড়বিশাকোল গ্রামের ইউপি সদস্য নবীর উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জমি দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন গ্রামের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। একপর্যায়ে জাহিদুলের দলের লোকজন প্রতিপক্ষের ইয়াসিন আলীর স্ত্রী ও ছেলেকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। প্রতিপক্ষের মারধরে ইয়াসিন আলীর স্ত্রী ইনসানের পেটের আট মাস বয়সী বাচ্চা মারা গেছে। এছাড়া ওই নারীর ১০ বছর বয়সী আরেক সন্তান ঢাকার একটি হাসপাতালে এখনো অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। গ্রামবাসী এঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করছে।

মামলা তদন্ত কর্মকর্তা ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের এসআই মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এর আগেও উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। সম্প্রতি আবারো দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক সময় ইনসান খাতুন নামে এক নারী ও তার ১০ বছর বয়সী সন্তান গুরুতর আহত হয়। ইনসান খাতুনের পেটে আট মাস বয়সী এক সন্তান প্রতিপক্ষের লোকজনের আঘাতে মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, ইনসান খাতুনের গর্ভের সন্তানের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তারপর এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উভয় পক্ষের মামলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ