অবাধে লোকালয়ে ঢুকছে বন্য প্রাণী, আতঙ্ক

সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এর মধ্যে অজগর সাপের সংখ্যাই বেশি। সর্বশেষ বুধবার বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বনসংগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামের আ. আজিজ শিকদারের গোয়ালঘর থেকে ২০ কেজি ওজনের ১২ ফুট লম্বা একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়।

এনিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে বনসংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা, মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২৬টি অজগর, চারটি বন্যশুকর, দুটি বার্কিং ডিয়ার, একটি চিত্রল হরিণ, দুইটি বানর উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া, শরণখোলার গ্রামে এসে আবার বনে ফিরে যায় একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

বিশাল আকারের একেকটি অজগর লোকালয়ে এসে গৃহস্থের হাঁস-মুরগি খেয়ে ফেলছে। যে কোনো সময় শিশুদের ওপরও আক্রমণ করতে পারে অজগর। এভাবে একের পর এক হিংস্র ও বিষধর বন্য প্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সুন্দরবন ছেড়ে বন্য প্রাণী লোকালয়ে আসার ব্যাপারে বন ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা সঠিক কারণ বলতে না পারলেও, প্রাথমিকভাবে বনে প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, খাদ্য সংকট, বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানার কারণে আবাসস্থল সংকট, নদী-খাল ভরাট হওয়াসহ নানা দিক চিহ্নিত করেছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত সাত অক্টোবর রাতে ভরাট হওয়া ভোলা নদী পার হয়ে একটি বাঘ শরণখোলার ধানসাগর ইউনিয়নের বনসংগ্ন পশ্চিম রাজাপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। পরদিন ৮ অক্টোবর সকালে ওই গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা বাঘের পায়ের ছাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি শরণখোলার বনসংগ্ন সোনাতলা গ্রামে আরো একটি বাঘ ঢুকে ছিলো।

বনসংলগ্ন খুড়য়াখালী গ্রামের দিন করিম জানান, মাসখানের আগে তার বসতঘরে বিশাল এক অজগর ঢুকে পড়ে। বেশ কয়েকটি মুরগীর ডিম খেয়েছে। পরে সেটি বনবিভাগ উদ্ধার করে। তার দেড় বছরের শিশু সন্তান একা ঘরের মধ্যে ছিল।

একই গ্রামের কামরুল খান জানান, তার বাড়িতে অজগর ঢুকে ৭-৮টি হাঁস-মুরগি খেয়ে ফেলে। বনের পাশে বসবাস করায় সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এম এ আজিজ বলেন, বন্য প্রাণী লোকালয়ে আসার নির্দিষ্ট কারণ বলা মুশকিল। তবে সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা অহরহ আসতে পারে। তাছাড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও অন্যান্য প্রাণী আসার নানা কারণ রয়েছে। যেমন, নদী ভারট হওয়াটা বন্য প্রাণীদের অবাধে লোকালয়ে আসার কারণ। খাদ্য সংকট দেখা দিলেও এরা চলে আসে। বনবিভাগকে এ ব্যাপারে আরো ব্যাপক গবেষণা করে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাট এবং জরুরি ভিত্তিতে ভরাট নদী-খাল খনন করতে হবে।

ওয়াইল্ড টিমের প্রধান নির্বাহী ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বনের পাশের লোকালয়ই এক-দেড়শ বছর আগে বন্য প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র ছিলো। এখন বনের পাশে এলাকায় ব্যাপক সবুজ বেড়েছে। সেইটানে বন্য প্রাণী এখানে এসে বনের পরিবেশ অনুভব করে। তাছাড়া বনে খাবার সংগ্রহ কঠিন। লোকালয়ে সহজে খাবার শিকার করতে পারে বলে বার বার ছুঁটে আসে। বাঘ খাবারের সন্ধানে আবার এলাকা হারিয়েও চলে আসতে পারে।

ড. আনোয়াররুল ইসলাম বলেন, একসময় লোকালয়ে বন্য প্রাণী ঢুকলে পিটিয়ে মেরে ফেলতো। কিন্তু এখন আর মানুষ সেটি করে না। আমরা মানুষকে সেই দিক থেকে সচেতন করতে পেরেছি।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বন্য প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়ে চলে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, বাঘ ও হিংস্র প্রাণী যাতে অবাধে আসতে না পারে সেজন্য লোকালয়ের পাশ থেকে কাটা তারের প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ