শনিবার , ২৪ নভেম্বর ২০১৮ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

অবশেষে ফরম পূরণে দেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত পেল পরীক্ষার্থীরা

Paris
নভেম্বর ২৪, ২০১৮ ৯:১৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আদায়কৃত এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা অবশেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

গত ১৩ নভেম্বর রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন অভিভাবকেরা। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক এস.এম. আব্দুল কাদেরের নজরে আসে।

এরপরই জরুরী ভিত্তিতে বিষয়টির তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ২২ নভেম্বর দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন সরকারকে নির্দেশ দেন ডিসি।

যার প্রেক্ষিতে আজ শনিবার সকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল আলমকে সাথে নিয়ে ওই স্কুলে তদন্তে যান ইউএনও। তদন্ত শেষে ১৪ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেন ইউএনও।

এবার পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মোট ১১৮ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আর এই ১১৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে নির্বাচনি পরীক্ষায় পাস করে মাত্র ১৯ জন। যারা ফেল করে তাদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক হারে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু কোনো পরীক্ষার্থীকেই রশিদ দেওয়া হয়নি। তবে ১৪ জন ছাড়া সকলের কাছ থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখানো হয়েছে। ফলে সেসব পরীক্ষার্থীরা টাকা ফেরত পান নি।


তদন্তকালে স্কুলের নথিপত্র ঘেঁটে ইউএনও দেখেন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফি ১ হাজার ৮৭০ এবং মানবিকের জন্য ১ হাজার ৭৭০ টাকা। কিন্তু ২ হাজার ১৫০ টাকার কম কারও কাছ থেকেই নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ১৪ জনের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩ হাজার ১৫০ টাকা করে। তাদের অতিরিক্ত টাকা আজ শনিবার ফেরত দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইউএনও এবং শিক্ষা কর্মকর্তা তা পরীক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেন।

স্কুলটির পরীক্ষার্থী নাহিদ হোসেনের কাছ থেকে ৩১৫০ টাকা নেওয়া হয়েছিল। ইউএনও আসার খবরে তার প্রতিবন্ধী পিতা আজিবর রহমান হাতে টানা ভ্যানে চড়ে স্কুলে যান। ভ্যান থেকে নেমে হামাগুড়ি দিয়ে তিনি ইউএনওর কাছে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। পরে তার ছেলে নাহিদ টাকা ফেরত পায়।


তাই একগাল হেসে আজিবর বলেন, ‘টেকা লিবে কিসেত? হাওলাত করা টেকা বা। ছাওয়াল পরীক্ষা দিবি বলি গিরামের দু’জনের থাইকি টেকা ধার করিছনু।’

প্রতিবন্ধীর ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদ বলে, তার বাবা প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে দিনমজুরের কাজ করে তাকেই সংসার চালাতে হয়। তাই সব বিষয়ে পাস করতে পারেনি। এই সুযোগেই তার কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পরীক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার পর তাদের রশিদ দেওয়ার জন্যও স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ইউএনও। পরে সব পরীক্ষার্থীকেই টাকা দেওয়ার রশিদ দেয় স্কুল কতৃপ্ক্ষ।


পরীক্ষার্থীদের ভাষ্য মতে, এর আগে যখন তারা রশিদ চেয়েছিল তখন প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার তাদের বলেছিলেন, ফরম পূরণের ফি আদায়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের রশিদ দেয়ার বিধান নেই। পরীক্ষার্থীরা আরো বলেন, টাকা হাতে দেখলে প্রধান শিক্ষক কথা বলেন, নয়তো বারংবার না শোনার ভান করেন। তবে বিষয়টিও শনিবার তদন্তকালে ধরেছেন ইউএনও। তদন্তকালে প্রধান শিক্ষকের পক্ষের কথাগুলোই তিনি শুনতে পাচ্ছেন, নয়তো, না শোনার ভান করে বসে থাকছেন।

এসময় অভিভাবকরা ইউএনও’র কাছে অভিযোগ করেন, স্কুলের শিক্ষক রহিদুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান কোচিং করান। তাদের কাছে কোচিং না করার কারণে শিক্ষার্থীদের ফেল করানো হয়েছে। আর প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার অভিভাবকদের না জানিয়েই গোপনে স্কুলের প্রাক্তন অফিস সহকারী আব্দুস সাত্তার প্রামানিককে স্কুল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক করেছেন। এরপর তারা দু’জনে মিলে নানা আর্থিক অনিয়ম আর দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির আহ্বায়ক। তাদের দাবি, স্কুলের কল্যাণেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছিল। যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাদের সবার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকেও আদায় করা টাকার পরিমাণ শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশির কারণ তাদের কাছে স্কুলের পাওনা ছিল।

এদিকে, শিক্ষক ও স্কুল কতৃপক্ষের নানা অভিযোগ দিতে একটুও কমতি রাখেনি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। তারা বলেন, আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা কেউ কোচিং, কেউ ডিশ লাইনের ব্যবসা করেন। কখনও ক্লাসে পড়াতে পড়াতে ফোন আসলে তারা কøাস ফেলে ব্যবসা সামলাতে যান। আবার তাদের ব্যাক্তিগত কোচিং এ না পড়লে সে বিষয়ে আমরা পাশই করতে পাড়ি না। অনেক সময় তাদের কোচিং এর বেতন বাকি পরে গেলে তারা আমাদের অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল পরিক্ষা দিতে দেয় না। এছাড়া স্কুলের ইব্রাহিম, সজিব সহ অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সরকারি ভাবে বিতরণের সব বই পাইনি। আর লাইব্রেরি থেকেও তো নেই। শিক্ষকরা লাইব্রেরি কোন বই নাই বলে ঢুকতেই দেই না।

এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের কোচিং ব্যবসায়ের সাথে জরিত শিক্ষাক রহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমার কোন কোচিং নাই। আমি এমন কিছু করি নাই।” এসময় এক অবিভাবক এসে শিক্ষক রহিদুল কে আপনি কি বলছেন আপনার কোচিং তো আছে। তখন শিক্ষক থতমত হয়ে ক্লাসে চলে যায়।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, আমি দুর্গাপুরে আসার পর থেকেই স্কুলটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু এ উপজেলায় ৭০টা স্কুল। একটা স্কুলের পেছনেই সময় দেওয়া যায় না। তবে এবার আমরা স্কুলটির ব্যাপারে ‘সিরিয়াস’ হয়েছি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলটিতে কোনো অনিয়ম থাকবে না বলে উপস্থিত শিক্ষার্থী,অবিভাবক ও গনমাধ্যমকর্মীদের অশ্বাস দেন।

ইউএনও লিটন সরকার বলেন, স্কুলটির এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সবার কাছ থেকেই বোর্ডের নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি আদায় করা হয়েছে। তবে ১৪ জন ছাড়া বাকিদের নানাখাতে খরচ দেখানো হয়েছে। তাই তাদের টাকা ফেরত দেওয়া যায়নি। তবে ১৪ জনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

স/অ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর