অপ্রয়োজনীয় কথা না বললেই কি নয়?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ক্ষমতাসীন দলে থাকলে এবং নিজে মন্ত্রী থাকলে বেহেশত বেহেশত মনে হতেই পারে। কিন্তু তা প্রকাশ না করে আনন্দ গোপন রাখাই ভালো। তাছাড়া অন্য দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে বুঝাতে গিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক আছে, এ ধরনের কথা হাসি-তামাশা করেও বলা উচিত না।

একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যখন বলেন, দেশে প্রত্যেকটি মানুষ খেতে পারছে, গায়ে জামা কাপড় আছে!  এ কথা সত্য হলেও নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অপমানজনক। সচেতন ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এসব কথায় কষ্ট পায়। আর তারাই কিন্তু অতি মূল্যবান ভোটার।

মন্ত্রীদের ভাবা উচিত তাদের কথা নিয়ে বিপক্ষ দলতো বটেই, নিজ দলের লোকেরাও হাসি ঠাট্টা করতে পারেন, যা দিন শেষে দলের জন্য ক্ষতিকর হবে। কথা বলতে না জানলে তাদের উচিত জাতীয় নেতাদের কাছ থেকে গোপনে ট্রেনিং নিয়ে ক্যামেরার সামনে আসা। শেখার কোনো বয়স নেই, শেখার মধ্যে লজ্জারও কিছু নেই।

সব সরকারের সময়েই কিছু মন্ত্রী বা নেতা থাকেন, যারা হচ্ছেন ‘অটো এলার্জি’। যাদের ভালো কথাতেও মানুষ বিরক্ত হয়। তাদের চিহ্নিত করে, বিদেশের দুতাবাসে পুনর্বাসন করলেই ভালো।

আওয়ামী লীগের এক সময় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, সমর্থন শক্তি সবই কমে গিয়েছিল। অবশ্যই জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহস, ধৈর্য ও দূরদর্শিতা দলকে পুনর্গঠন করেছে।

নেত্রী এবং জাতীয় নেতাদের পাশাপাশি দেশের বহু মানুষ কষ্ট করে, নিজের ছাত্রজীবন নষ্ট করে, রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে, জেল খেটে, নির্যাতন- অপমান সয়ে, আত্মীয় হারিয়ে, বন্ধু হারিয়ে, পিতা হারিয়ে, পুত্র হারিয়ে, পঙ্গুত্ববরণ করে, কন্যার সম্ভ্রম হারিয়েও এ দলকে শক্ত অবস্থানে এনেছেন।

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে ভূমিকা রেখেছেন বহু নির্লোভ সাংবাদিক, বহু মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, পেশাজীবী। বারবার বিনা দোষে নির্যাতনে শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ ও নারীরা। আজ তাদের অপ্রয়োজনীয় মনে করা অনেক বড় নির্মমতা।

পচাত্তরের পরবর্তীতে ছাত্রলীগ করতে আসা মানুষেরা কিছু হওয়ার আশায় নয়, রাষ্ট্রীয় সুশাসন, উন্নয়ন এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে রাজপথে এসেছিল।

যারা ৯০ এর এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছে, ৯৬ এর অসহযোগ আন্দোলন করেছে এবং ১/১১ এর সময়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, তাদের রাজনৈতিক সতীত্ব পরীক্ষার কিছু নেই।

অনেক দূরদর্শী ব্যবসায়ী ৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছেন। কারণ, তারা ৯১ সালে বিএনপিতে যোগদানকারীদের সফলতা দেখেছেন। সময়ের প্রয়োজনে তাদের দলে নিতেও হয়েছিল। আজ তাদের অনেকে মন্ত্রীও বটে।

অনেকে সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্ম নিয়েছেন। বিশ্বের বড় বড় দেশে ছিলেন, নগরীকত্ব নিয়েছেন। ভালো ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তারা নিঃসন্দেহে যোগ্য লোকও বটে এবং নিজ অবস্থান থেকে দলের পক্ষে নিশ্চয়ই কাজও করেছিলেন, আর সেজন্যই এখন মন্ত্রী।

তবে জ্ঞাণী গুণি ধনী মানুষেরা, যারা কখনো সাধারণ মানুষের সাথে চলাফেরা করেননি, রাস্তার পাশে ভাঙা বেড়ার চা দোকানে চা খাননি, ধুলো উড়া রাস্তার পাশে কর্মীদের সাথে খিচুরি খাননি, কর্মীর লাশ ছুয়ে কাঁদেননি, নিজে প্রতিপক্ষের বা পুলিশের হাতে মার খাননি, কাউকে যার মার দিতেও হয়নি, কখনো মামলায় বাদী বা আসামী হননি, কখনো জেল খাটেননি, এমন নেতাদের এমপি- মন্ত্রী না বানিয়ে সচিব মর্যাদায় কাজে লাগালে দলের জন্য আরও ভালো ফল আসতে পারতো হয়তো।

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কেউ কেউ এমপি। ২০০৮ সালের এমপিদের মতো ভাগ্যবান, আগামী একশ বছরেও এদেশে আর কেউ হবেন না। তাদের অনেকেই ‘একে তিন’ বলে থাকেন। তাদের অনেকের ওপরই মানুষ বিরক্ত। তাদের আত্মীয় স্বজনদের ওপর আরও বেশি বিরক্ত।

এসকল এমপি সাহেবরা নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্য থেকে বাছাই করে – মাদককারবারি, জমি দখলকারী, টেন্ডারবাজ, সালিশ ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ-অস্ত্রবাজদের জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দায়ীত্বে বসিয়ে রেখেছেন।

এ ধরনের বিতর্কিত ‘একে তিন’ মাননীদের পরাজিত করতে বিরোধী দলের কাউকে দরকার নেই, তাদের বিরুদ্ধে হিজরা দাড়ালেও জয়ী হয়ে যেতে পারে।দায়ীত্বে থেকে দীর্ঘদিন খুব কম মানুষই জনপ্রিয় থাকতে পারে। কারণ, তারা নিজ নিজ একালায় জ্ঞাতি -বংশসহ ধনী হয়ে এখন রাজত্ব কায়েম করেছেন। তারা নিজ দলের কর্মী সমর্থক এবং জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন।

দলের পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা নিজের চাইতে অযোগ্যদের দ্বারা শাসিত হতে দেখে ভেতরে ভেতরে মারাত্মক ক্ষ্যাপে আছেন, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা নেতারা কিংবা মন্ত্রী এমপিরা কেউ উপলব্ধি করলেও নেত্রীকে এসব পরামর্শ দেন না।

আমি নিজে এমপি বা মন্ত্রী থাকলেও এসব বলার সাহস দেখাতাম না। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তাই নেত্রীর প্রতি অনুরোধ, মন্ত্রী এমপি আমলা নয়, বরং ছোট নেতাদের পরামর্শ আমলে নিন।

লেখক: যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন