অপাঠ্য কিছু মনে করো না, সবই পাঠ্য: হাসান আজিজুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘যেটি করার জন্য বইয়ে নির্দিষ্ট করে বলা আছে তা-ই অপাঠ্য। ক্লাসে যা পড়ানো হয় তা অপাঠ্য এবং ক্লাসের বাইরে যা কিছু আছে তা পাঠ্য। অপাঠ্য কোন কিছুই না, সবই পাঠ্য। জ্ঞানার্জনের জন্য সকল ধরনের শিক্ষার প্রয়োজন আছে।’ আজ রোববার রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের হল রুমে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বই পড়লে মানুষ জগৎ সম্পর্কে জানতে পারে। তবে বইয়ের জগৎ এবং বাস্তাবিক জগৎ মেলাতে হবে। যে লেখক সেটা করেন না, সে লেখকের বই পরিত্যাজ্য। কেন লিখবে যদি তাতে জীবনের কথা না থাকে, বর্তমানে কথা না থাকে,যদি জীবনের গভীর রহস্যের কথা ঈঙ্গিত করা না থাকে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা কীভাবে সময় কাটাও আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে। এখন কোন কথা যদি ভালও লাগে তাহলে হাত তালি দেওয়াও সম্ভব হবে না। কোন কথায় তোমাদের কাছে হাততালি পাব সেটা সম্ভব না।
তিনি আরো বলেন, মানুষ আজ এক ভার্চুয়াল জগতে চলে এসছি। যা আছে, আবার নাইও। তৈরী করা তেতুল আর খাঁটি তেতুলের টক যেমন এক রকম হয় না তেমনি মানুষ এবং মানুষের মতো এক নয়। তোমাদের মানুষের মতো না হয়ে মানুষ হতে হবে।
হাসান আজিজুল হক আরো বলেন, মানুষ সামান্য প্রাণী নয়, এটা বিশ্বাস করতে হবে। ঈশ্বর তার নিজের প্রতিবিম্বের মতো মানুষকে তৈরী করেছেন- এটা ধর্ম শাস্ত্রে ও লিখা আছে। পৃথিবীতে মানুষ প্রত্যেকে একা এবং স্বতন্ত্র। গরু যেমন জাতিতে বড় ছোট সবাই গরু আমরাও তেমনি সবাই মানুষ। আলাদা কিছুই নয়। সেজন্য মানুষের এই মানবতা, মানবাত্ম  গুলোই মানুষ প্রকাশ করে।মানুষ যখন বলে দে আমার টাকা,তখন তার মধ্যে যে লোভ এবং লালসা তাছে সেইটা প্রকাশ করে। টাকা দে, চাঁদা দে, মেরে ফেলব, বাড়ি থেকে বেরোস না,এটা কে বলে? যে বলে সে মনুষ্য নয়। অন্য কোন জীব। আমি মূল্যায়ন করতে পারব না। তবে সে অন্য কিছু হলেও মনুষ্য না। মনুষ্য হলে কখনও এই কথা বলে না। মানুষ যদি মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায় তবে সে মানুষ হওয়া থেকে দূরে যায়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষ পড়তে পড়তেও ক্লান্ত হয়, খেতে খেতেও ক্লান্ত হয়। বই পড়ে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার দিকে তারা যেন যায়, আজকের এই বই পড়ার কার্যক্রম যেন বৃথা না যায়, বইগুলো যেন বাদামের ঠোঙ্গা না হয়, সেই তুল্য মূল্য বিচার করে পাঠ করতে হবে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় মোবাইল ফিনান্সসিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সহায়তায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কলেজ কর্মসূচির বইপড়া কার্যক্রম শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে শুরু করা হলো।

01
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্ভোধন করেন। এ সময় বিকাশের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ক্যাপ্টেন সাবের শরিফ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকায়েপ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক ও বিশিষ্ট লেখক ড. জাহাঙ্গীর আলম ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শরিফ মোঃ মাসুদসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাওলা বলেন, যে বই তোমাকে বলে যে মানুষ খুন করলে বেহেশতে যাবে সে বই পড়বে না।  সে বই পড়া তো দূরে থাক সে বই ছুঁয়েও দেখবে না।
প্রসঙ্গত, এই বইপড়া কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গত বছরে ১২ থেকে ১৬ টি করে বই পড়ার সুযোগ পায়। আর চলতি বছর থেকে কলেজ কর্মসূচি শুরুর মাধ্যমে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা বছরে ১২টি করে বই পড়ার সুযোগ পাবে।

স/মি