অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারিণীর রোজা রাখার বিধান

রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। রোজার ফরজ হওয়ার বিধান প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই ফরজটি শরিয়ত কয়েকটি অবস্থায় শিথিল করেছে। পরিভাষায় যাকে রুখসত বা ছাড় বলা হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

এ আয়াতে ‘অসুস্থতা’ শব্দটি ব্যাপক। নারীর মাসিক ও প্রসব-পরবর্তী সময়ও এর অন্তর্ভুক্ত। তা ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা  নারী যদি স্বাস্থ্যহীনতা ও সন্তানের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা অনুভব করে এবং দুগ্ধদানকারিণী মহিলাগণ তার সন্তানের দুধ পান করাতে গিয়ে যদি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অথবা রোজা রাখার ফলে সন্তান দুধ না পায়। এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞ দ্বিনদার ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ইসলাম রোজা ভাঙার অনুমতি দিয়েছে। তবে পরবর্তী সুস্থতার সময় তা কাজা করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। (ফাতহুল কাদির : ২/২৭২, রদ্দুল মুহতার : ২/২০২)

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাহাবি আনাস বিন মালেক (রা.) একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ। তিনি বলেন, এক সফরে আমাদের ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অশ্বারোহী বাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করল। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এলাম। আমি তাঁকে সকালের খাবার খাওয়ারত অবস্থায় পেলাম। তিনি বললেন, কাছে আস এবং খাও। আমি বললাম, আমি রোজা আছি। তিনি বললেন, সামনে আস, আমি তোমাকে রোজা প্রসঙ্গে কথা বলব। আল্লাহ তাআলা মুসাফির লোকের রোজা ও অর্ধেক নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের রোজা মাফ করে দিয়েছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৫)

এই মর্মে সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলা রমজানের রোজা ভাঙতে পারবে। তবে পরে তা কাজা করে নেবে। রোজার বদলে মিসকিনদের খাওয়াবে না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস : ৭৫৬৪)

গাইনি চিকিৎসকরা বলেন, গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয়। তাই একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয়বার বা তারও বেশি খেতে বলা হয়। এখন গরমকাল। সাধারণত শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কষ্টকর ব্যাপার। তা ছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর ঘেমে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন। এমনকি অনাগত শিশুটি অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে জন্মানো কিংবা মায়ের মূত্রনালির ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে।

এ ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ ও ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এমন ডাক্তারের পরামর্শক্রমে রোজা রাখলে যদি কারো শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে; রমজানের রোজা ভাঙা যাবে। তবে পরবর্তীতে সুস্থ অবস্থায় তা কাজা করে নিতে হবে। কিন্তু রোজা রাখার দ্বারা যদি স্বাস্থ্যের ওপর কোনো প্রভাব না পড়ে এবং সন্তানের জন্যও আশঙ্কাজনক কোনো অবস্থা তৈরি না হয় তাহলে তিনি রোজা রাখবেন। আর এই রোজা রাখারও অনেক ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ বলেন—রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন, রমজান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করেন, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত আবরু রক্ষা করে চলেন এবং স্বামীর অনুগত থাকেন; তিনি জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা হবে চাইলেই প্রবেশ করতে পারবেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৬১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজানের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে এ মাসের বরকত রহমত অর্জনের তাওফিক দান করুন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ