অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে ৯০ হাজার কোটি ডলার

কভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে বেশির ভাগ ভোক্তারা বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্য থেকে শুরু করে বাগান করার জিনিসপত্র সবই তাঁদের কিনতে হয়েছে অনলাইন থেকে। মাস্টারকার্ডের সর্বশেষ  ‘রিকভারি ইনসাইটস’-এর  রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সারা বিশ্বে ২০২০ সালে অনলাইনে খুচরা কেনাকাটায় বাড়তি ৯০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছেন ভোক্তারা। অন্যভাবেও বলা যায়, ২০২০ সালে প্রতি পাঁচ ডলার খুচরা ব্যয়ের এক ডলার ব্যয় হয়েছে ই-কমার্সে, তুলনামূলকভাবে ২০১৯ সালে যেটি ছিল প্রতি সাত ডলারে এক ডলার।

kalerkantho

মহামারির কারণে সশরীরে উপস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ায় খুচরা বিক্রেতা, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য বড় ও ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রেও, সেবাদাতারা অনলাইনে ভোক্তাদের কাছে পণ্য বা সেবা পৌঁছে দিয়েছেন। মাস্টারকার্ডের ‘রিকভারি ইনসাইট’-এর মতে, করোনা মহামারির কারণে ডিজিটাল খাতে নতুন করে সম্পৃক্ত হওয়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নতুন ব্যবস্থা বা উদ্যোগ স্থায়ী হতে পারে।

মাস্টারকার্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং হেড অফ দ্য মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট, ব্রিকলিন ডাওয়ের বলেন, ‘যখন ভোক্তারা ঘরে আবদ্ধ থাকছেন। ই-কমার্স ব্যবস্থার কারণে তখনো তাঁদের অর্থ বহুদূর পরিভ্রমণ করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটির তাৎপর্যপূর্ণ কার্যকরণ রয়েছে। যেসব দেশ বা কম্পানি ডিজিটাল খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে, তারা দ্রুত সুবিধা নিতে পেরেছে। আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যায় এমনকি খুব ছোট ব্যবসাও ডিজিটাল সেবায় গিয়ে প্রসার ঘটাতে পারে। যদিও  ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক পার্থক্যকরণের কারণে ডিজিটাল রূপান্তর সর্বজনীন বা ধ্রুব নয়। তবে এই রিপোর্টে কিছু বহুল প্রচলিত প্রবণতা উঠে এসেছে।’

প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল খাতে খাপ খাওয়াতে সক্ষমরা বেশ এগিয়ে গেছে : যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো, যারা আগে থেকেই ডিজিটাল খাতে এগিয়ে, তারা দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল খাতে বড় ধরনের রূপান্তর দেখেছে, যেটি স্থায়ী হবে। তবে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর মতো দেশ যাদের ই-কমার্স খাতে অংশীদারি আগে থেকে কম তারা এই তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। এ ছাড়া ই-কমার্স খাতের বিবর্তনে সবচেয়ে শক্তিশালী অঞ্চলগুলো হচ্ছে এশিয়া প্যাসিফিক, নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপ।

মুদিপণ্য ও ডিসকাউন্ট স্টোরের ডিজিটাল উন্নতি টিকে থাকতে পারে। ভোক্তাদের নতুন অভ্যাস তৈরি ও কভিডপূর্বের পর্যালোচনা হিসেবে ধারণা করা যায়, ৭০-৮০ শতাংশ মুদি ই-কমার্স টিকে থাকতে পারে। মহামারিতে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ভোক্তাদের কেনার আগ্রহ বা অর্ডারের হিসেবে বিভিন্ন দেশে বিক্রিতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের চাহিদা বেড়েছে। হাতের কাছে অনেক বেশি অপশন থাকায় ভোক্তারা আন্তর্জাতিক ই-কমার্সে অর্থ ব্যয় করছেন। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেটি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনলাইন রিটেইলে ৩০ শতাংশ বেশি কিনছেন ভোক্তারা : ক্রেতাদের পছন্দের বিষয় বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ওয়েবসাইট ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে আগের চেয়ে কেনাকাটা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ইতালি ও সৌদি আরবের মতো দেশের বাসিন্দারা ই-কমার্সের মাধ্যমে গড়ে ৩৩ শতাংশ বেশি কেনাকাটা করছেন। এর পরই কাছাকাছি অবস্থান রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশের।

ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে : কভিড-১৯-এর কারণে এমনকি দোকানেও ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে। ভোক্তারা স্পর্শ এড়িয়ে যেতে চাওয়ায় লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।  ‘ব্রিক-অ্যান্ড-মর্টার রিটেইল স্টোর’ ও রেস্টুরেন্টে অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বর্তমান ট্রেন্ড বা প্রবণতার চেয়ে নন-ক্যাশ পেমেন্ট বেড়েছে অতিরিক্ত ২.৪ শতাংশ। পুরো বছরে ক্যাশ বা নগদ লেনদেনের চেয়ে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বেড়েছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ