অতিমুনাফা, তাই মধ্যস্বত্বভোগীরা বেপরোয়া

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীতে বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম। ভোজ্য তেল, আদা, রসুন, চাল-চিনির সঙ্গে দাম বেড়েছে শীতের শাক-সবজির। সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যে উঠে এসেছে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের দুর্বল নজরদারির ফলে কিছুতেই সিন্ডিকেটের হাত থেকে বের করে আনা যাচ্ছে না দেশের ভোগ্য পণ্যের বাজার।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্যের সরবরাহ খাতে মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব বাড়ার ফলে অভ্যন্তরীণ এবং আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই পণ্যের দাম বাড়ছে। আইনগত কাঠামোতে উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনা সম্ভব না হলে বাজারের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হয়ে পড়বে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। দেশে আদা ও রসুনের বড় একটি চালান আসে চীন থেকে। কিন্তু এসব পণ্যে দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও গত এক সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।

গতকাল শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি রসুন বিক্রি করছে ২০০ টাকা, আদা ১৫০ টাকা। গত এক সপ্তাহে আদার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। তবে কারওয়ান বাজারে চীন থেকে আমদানি করা এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৩৫০ টাকা, তুরস্কের ৩৮০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৫৩০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন  বলেন, বাজারে আদা-রসুনের ঘাটতি নেই। কিন্তু আড়তদার এবং আমদানিকারকরা কম করে বাজারে ছাড়ছেন। চীনের কী এক রোগের কারণে পণ্য আসছে না বলে তাদের কম করে দিচ্ছেন আড়তদাররা।

শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শহিদুল্লাহ জানান, শীতের সবজি পর্যাপ্ত থাকলেও পরিবহন খরচ বেশি এবং পথে পথে চাঁদাবাজির ফলে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বাজার মালিবাগ ও ফকিরাপুলে সবজির বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, রববটি ১২০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা।

সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিএজি) কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত এক বছরের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। দিন দিন লাগাম ছেড়ে যাচ্ছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। ফলে আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের কোনো নজরদারিই কাজে আসছে না। ফলে ৩০ টাকার পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কিনে খেতে হচ্ছে আমাদের।’

সরকারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক বছরের (জুলাই-জানুয়ারি) প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০০ শতাংশ, আদা ৩৩.৩৩ শতাংশ, আটা ১২.৭০ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৮.৬৯ শতাংশ, বোতল (এক লিটার) ৪.৪৮ শতাংশ, মসুর ডাল ১৫.৬৩ শতাংশ, রসুন ১৭৭ শতাংশ এবং চিনি ২২. ৮৬ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত এক মাসে ভোগ্য পণ্যের বাজারে দাম কিছুটা কম হলেও অভ্যন্তরীণ এবং আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই ভোগ্য পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। সরবরাহ লাইনে মধ্যস্বত্বভোগী প্রভাবেও বাড়ছে দাম।

তিনি বলেন, দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতার ফলে দেশের ভোগ্য পণ্যের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া আইনগত কাঠামোতে উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে না নিয়ে আসা গেলে বাজারের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হয়ে পড়বে।