সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৩ দিন। শেষ মুহূর্তের প্রচারনায় রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোর্ক্যাটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোটারদের মন জয়ে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কমলা হ্যারিস এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ভোটারদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাতিল করে দিতে পারেন। এদিকে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের মতো এবারও ফলাফল ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলে তার সমর্থকরা ঝামেলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওদিকে কমলাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগে সিবিএস নিউজের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের মামলা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্সের।
অ্যারিজোনা ও নেভাডার উদ্দেশে রওয়ানা করার আগে উইসকনসিনের ম্যাডিসনে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য কথা বলেন কমলা হ্যারিস। এ সময় তিনি ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দেন যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার মেয়াদে ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বাতিল করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রচারণার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ও কমলা হিস্পানিক ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানাতে বৃহস্পতিবার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসে এক সমাবেশে হাজির হন পপতারকা ও হলিউড অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ। তিনি এই সমাবেশকে তার জন্য ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ’ হিসাবে অভিহিত করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ল্যাটিনো বা হিস্প্যানিকদের ভোট অনেক সময় নির্ধারক হয়ে ওঠে। কমলার সমাবেশে অংশ নিয়ে তাই ল্যাটিনো ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন লোপেজ। তিনি বলেন, ‘আমি ল্যাটিনোদের শক্তিতে বিশ্বাস করি।’
সমাবেশে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) আমাদের বিভক্ত করার জন্য কাজ করে আসছেন।’
এদিকে পেনসিলভেনিয়ার ভোট জালিয়াতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে জয়-পরাজয় নির্ধারণকারী এসব সুইং স্টেটগুলোতে ভোটের ফল পক্ষে না এলে ট্রাম্প আবারও ভোট বাতিলের চেষ্টা চালাতে পারেন।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল এখনো মেনে নেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, ট্রাম্প সমর্থকদের একটি বড় অংশ এখনো বিশ্বাস করে, সেই নির্বাচনের ফল ‘চুরি’ করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সিএনএন জানিয়েছে, এমন ‘চুরি’ ঠেকাতে বদ্ধপরিকর রিপাবলিকান সমর্থকরা। এমন ‘চুরি’ হলে, অর্থাৎ ট্রাম্প নির্বাচনে হারলে কীভাবে ফলাফল পালটাতে হবে, সেই পরিকল্পনাও করে রেখেছে ট্রাম্পের ‘চুরি থামাও’ আন্দোলন।
ফলাফল ঘন ঘন বদলায় এমন দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য (সুইং স্টেট) নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। প্রয়োজনে তারা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার মতো বিক্ষোভও করতে পারেন।
গত মাসে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক বুলেটিনে বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে (ট্রাম্পের প্রচারণা) উসকানিমূলক বক্তব্য আবারও আগের মতো সহিংসতা ডেকে আনতে পারে।
ট্রাম্প এক নির্বাচনি সমাবেশে বলেছেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচনের যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়ে সেক্ষেত্রে তিনি পরাজয়ের শঙ্কা করছেন। তার এ ধরনের বক্তব্য আশঙ্কা করা হচ্ছে পরাজিত হলে তিনি সেই পুরোনো খেলাই খেলবেন।
বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, পেনসিলভেনিয়াতে আমরা তাদের বড় ধরনের কারচুপি ধরে ফেলেছি সেটার বিচার দাবি করেছি।
তার এ দাবির প্রেক্ষিতে কমলার সিনিয়র প্রচার কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে তিনি যখন জিতবেন না তখন, আমাদের নির্বাচন এবং এর প্রতিষ্ঠানের ভেতর সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প যদি জিতে যান তাহলে যেন সুষ্ঠু ভোট হবে, আর তার এসব বক্তব্য হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
এদিকে সিএনএন জানিয়েছে, কিছু ট্রাম্পপন্থি গোষ্ঠী নির্বাচনে হারলে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা করেছে। যদি এক-দুই রাজ্যের ফলাফল উলটে দিলেই ট্রাম্পকে জেতানো সম্ভব হয়, তাহলে এরকম রাজ্যগুলোতে নির্বাচনে কারচুপির মামলা দিয়ে তারা ফলাফল বদলানোর চেষ্টা করবে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে তেমন আইনি প্রস্তুতিও তারা নিয়ে রেখেছে।
আবার সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচন বিঘ্নিত করে ফলাফল পালটে দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। সাধারণত বড় শহরগুলোতে ডেমোর্ক্যাটরা বেশি ভোট পায়। একটি অঙ্গরাজ্যের যেসব অঞ্চলে ডেমোর্ক্যাটদের ভোট বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেখানে ট্রাম্প সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিবিএস নিউজের বিরুদ্ধে মামলা : সিবিএস নিউজের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের মামলা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার করা মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, সিবিএস ডেমোর্ক্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার ৬০ মিনিটস প্রোগ্রামে এমনভাবে সম্পাদনা করে প্রচার করেছে, যাতে তাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা যায়। উত্তর টেক্সাসের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে করা এই মামলায় ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, সিবিএস নিউজ নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক ও অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং প্রতারণাপূর্ণ সংবাদ বিকৃতি করেছে।
সিবিএস নিউজ এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করে জানিয়েছে, সাক্ষাৎকারটি পরিবর্তন করা হয়নি। ৬০ মিনিটস হ্যারিসের জবাবের কোনো অংশই গোপন করেনি। ৬০ মিনিটস ন্যায্যভাবে সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করেছে, যাতে দর্শক সঠিক তথ্য পেতে পারেন। ট্রাম্পের এই মামলা আইনিভাবেই লড়বে বলে জানিয়েছে সিবিএস কর্তৃপক্ষ।
ট্রাম্প ৬০ মিনিটসকে একই ধরনের সাক্ষাৎকার দিতে সম্মত হয়েছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষ তার জবাবের সত্যতা যাচাই করবে জানালে তিনি আর সাক্ষাৎকার দেননি। গত মাসের শুরুতে ট্রাম্প সিবিএসের বিরুদ্ধে মামলা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, এর লাইসেন্স বাতিল হওয়া উচিত এবং ৬০ মিনিটস বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মূলত সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলই পুরো নির্বাচনের ফল ঠিক করে দিতে পারে।
সূত্র: যুগান্তর