সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি বলেছেন রাজপরিবারের কেউ রাজা বা রানী হতে চায় না। একইসাথে তিনি বলেছেন “প্রয়োজনের সময় আমরা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করবো”।
“রাজপরিবারের কেউ কি আছে যে রাজা বা রানী হতে চায়? আমার মনে হয় না” নিউজউইক-কে বলেছেন প্রিন্স হ্যারি।
তিনি এটাও বলেছেন রাজপরিবারের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন “জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের কথা ভেবে”।
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের বিষয়েও কথা বলেছেন প্রিন্স হ্যারি।
তাঁর মতে, মা প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর শেষযাত্রার অনুষ্ঠানে কফিনের পেছনে সন্তানদের হেঁটে যাওয়ার বিষয়টি একদমই সঠিক ছিল না।
প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, ‘১২ বছরের শিশুকে এমনটা করতে বলা মোটেও ঠিক কিছু নয়”।
১৯৯৭ সালের ৩১শে আগস্ট প্রিন্সেস ডায়ানা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিন পর তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে যোগ দিয়েছিলেন রাজপরিবারের সকল সদস্য। প্রিন্স হ্যারি তাঁর বাবা, দাদা, ১৫ বছর বয়সী ভাই প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর চাচাদের সাথে লন্ডনের রাস্তা ধরে কফিনের পেছনে পেছনে হেঁটেছিলেন। শেষকৃত্যের ওই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল যা দেখেছিল বিশ্ববাসী।
সাক্ষাৎকার প্রিন্স হ্যারি বলেছেন মায়ের মৃত্যুর শোক কাটাতে তাঁকে কাউন্সিলিং-ও নিতে হয়েছিল।
“আমার মা মাত্র মারা গেছেন আর তার কফিনের পিছনে পিছনে দীর্ঘসময় ধরে আমাকে দীর্ঘসময় ধরে হাঁটতে হলো! আমার আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ। টেলিভিশনে আমাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে”।
“আমার মনে হয় না কোনো শিশুকে কোনো ধরনের পরিস্থিতিতেই এমন কিছু করতে বলা উচিত”-মার্কিন ওই ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন প্রিন্স হ্যারি।
রাজপরিবার সংক্রান্ত বিবিসির সংবাদদাতা পিটার হান্টের মতে প্রিন্স হ্যারির এই সাক্ষাৎকারটি অনেকের মনেই সমবেদনা জাগাবে যে একজন প্রিন্স তাঁর মায়ের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, অন্যদিকে অনেকের মনে প্রশ্নও জাগাবে।
রাজপরিবারের একজন সদস্য বলছেন যে রানীর উত্তরাধিকারীদের বিশেষ সুযোগসুবিধা নিতে হয়, তারা নাই চাইলেও সেটি নিতে হয়-এ বিষয়টিও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগাবে বলে মনে করছেন পিটার হান্ট।
যদিও প্রিন্স হ্যারি বলেছেন যে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই রাজপরিবারের সদস্যরা কাজ করেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের একটি অংশই শিরোনামে আসছে, ডেইলি মেইলও শিরোনাম করেছে “হ্যারি: রাজপরিবারের কেউ রাজা-রানী হতে চায় না”।
মা প্রিন্সেস ডায়ানার শেষকৃত্য নিয়ে কথা বলার কারণে প্রিন্স হ্যারি কিছুটা নিরাপদে থাকলেও তার পরিবারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এত ছোট বয়সী একটা শিশু হাজার হাজার মানুষের সামনে তার মায়ের কফিনের পেছনে হাঁটবে এটা সেই শিশুর মনে দাগ কাটবে- ১৯৯৭ সালের সেদিনই রাজপরিবারের এ বিষয়টা বুঝতে পারা উচিত ছিল।
তাছাড়া প্রিন্স হ্যারি তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে একবারও তাঁর বাবার প্রসঙ্গ আনেনি-এটাও অনেকের কাছে ভাবনার বিষয় হবে বলছেন বিবিসির সংবাদদাতা পিটার হান্ট।
প্রিন্স হ্যারি মার্কিন ওই ম্যাগাজিনিকে বলেছেন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের আধুনিকীকরণে তিনি কাজ করছেন। “বিষয়টা অনেক জটিল। কৌশলগতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখাটা আসলেই কষ্টকর। রাজপরিবারের সদস্যরা সাধারণ মানুষ ও বিশ্বাবাসীর সামনে নিজেদের হালকা দেখাতে চায় না”।
প্রিন্সেস ডায়ানা যে হ্যারি ও উইলিয়ামকে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সেটারও প্রশংসা করেন প্রিন্স হ্যারি। দুই ভাই সাধারণ জীবন যাপন করতেন যা জানলে লোকে অবাক হবে।
এখনও তিনি তেমনটাই করার চেষ্টা করেন বলে জানান প্রিন্স হ্যারি।
“আমি নিজেই নিজের কেনাকাটা করি। যদিও মাঝেমধ্যে একটু চিন্তাও হয় এই ভেবে যে কেউ তার মোবাইলে আমার ছবি তুলে ফেললো কিনা। তবে আমি তুলনামুলক সাধারণ জীবন যাপন করছি। আমার সন্তান হলে তাদেরও তেমনটা করতে উদ্বুদ্ধ করবো”।
“এমনকি আমি যদি রাজাও হই, নিজের কেনাকাটা আমি নিজেই করবো”- বলেন প্রিন্স হ্যারি। সূত্র: বিবিসি বাংলা