সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাজ্যে আইএস সমর্থকদের হাতে নিহত বাংলাদেশি ইমামের এক ছেলে বলেছেন, সন্ত্রাসীদের সমর্থকরা সেখানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীর ছদ্মবেশ নিয়ে তরুণদের মৌলবাদী করে তুলছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইমাম জালাল উদ্দিনকে হত্যায় মোহাম্মেদ সাঈদী নামে এক তরুণের ২৪ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন ইমামের ছেলে সালেহ আল-আরিফ।
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এখানকার কিছু মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা প্রকৃত অর্থেই আইএস সমর্থকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের বিশ্বাস এখানকার বাঙালি কমিউনিটিতে অনেক আইএস সমর্থক রয়েছে। বাইরে থেকে মনে হয়, তারা ভালো কিছু করছে- স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ও অন্যান্য জিনিস।
“তারা মনে করে, তারা (জঙ্গিবাদী) শুধু একটি ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করতে চায় এবং এর মাধ্যমে তারা কমিউনিটির তরুণদের মৌলবাদী করে তুলছে।”
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে রোগ নিরাময় ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে তাবিজ দেওয়ায় বাংলাদেশি ইমাম জালাল উদ্দিনকে হত্যা করে দুই আইএস সমর্থক।
বিষয়টি নিয়ে কমিউনিটি সদস্যরা আতঙ্কিত জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা বিশ্বাস করেন, ওই ব্যক্তিদের কোনো না কোনোভাবে আইএসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তারা এর থেকে মুক্তি চায়। তারা পুলিশকে সহযোগিতা করতে চায়।”
সাঈদী ও মোহাম্মেদ আব্দুল কাদির (২৪) নামে তার এক বন্ধু জালাল উদ্দিনকে হত্যা করে। রোগ নিরাময় ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে ইমাম তাবিজ দেওয়ায় তার প্রতি বিদ্বেষ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে আদালতে উঠে এসেছে। ইসলামি পন্থায় রোগ নিরাময়ের এ চর্চাকে আইএস ও কিছু উগ্রপন্থি সালাফি মুসলিম গ্রুপ ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’ হিসেবে দেখে।
ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে এ মামলার বিচার চলাকালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেটারের ম্যানচেস্টারের রচডেলের একটি শিশু পার্কে ইমাম জালাল উদ্দিনের ওপর হামলার দেড় বছর আগে থেকে তার ওপর নজরদারি করেন ঘাতকরা।
শুক্রবার এ মামলার রায়ে সাঈদীর ২৪ বছরের কারাদণ্ড হলেও মূল আসামি কাদির এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিনের মধ্যে যুক্তরাজ্য ছেড়ে তুরস্কের ইস্তানবুল যান কাদির, পরে সেখান থেকে তিনি সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটিতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা ব্রিটিশ পুলিশের।
বাংলাদেশি ইমাম জালাল উদ্দিনকে হত্যায় দণ্ডিত মোহাম্মেদ হোসেন সাঈদীর এই ছবি প্রকাশ করেছে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ।
স্কাই নিউজকে আরিফ বলেন, তার বাবার হত্যাকাণ্ডে আরও কয়েকজন জড়িত বলে তিনি মনে করেন। হামলায় তারা অংশ না নিলেও কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে তারা জানতেন।“এসব লোকের ওপর কারও নজর রাখা দরকার। এর যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত।”
নিজের বাবা সম্পর্কে তিনি বলেন, “তিনি খুব ধার্মিক, খুব শান্তিপ্রিয় ও জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তার কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলেও বলিষ্ঠ ধর্মীয় মতাদর্শ ছিল। তিনি যা বিশ্বাস করতেন তার চর্চা করার চেষ্টা করেছেন, যাতে তাকে মরতে হলো।”
শুক্রবার নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে পঠিত একটি বিবৃতিতে আরিফ বলেন, নিহত হওয়ার দুদিন আগে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। ১৫ বছর আগে যুক্তরাজ্যে আসার পর এ বছরের শেষ দিকে বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।
২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর আর স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে দেখা হয়নি জালাল উদ্দিনের। তিনি খুন হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে যান কয়েকজন স্বজন।
সূত্র: বিডি নিউজ