সোমবার , ১০ জুন ২০২৪ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি বিনিয়োগ কমে আবার ২৩ শতাংশের ঘরে

Paris
জুন ১০, ২০২৪ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বেসরকারি বিনিয়োগের অবদান আবার কমছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে এই সূচকের অবদান নেমে এসেছে ২৩ শতাংশের ঘরে। আগের দুই অর্থবছরে এটি ২৪ শতাংশের ঘরে ছিল। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ কমলেও জিডিপিতে সরকারি খাতের বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে।

গত অর্থবছরে এটি ৬ শতাংশের ঘরে নামলেও এবার তা বেড়ে ৭ শতাংশের ঘরে যাচ্ছে। তারপরও জিডিপিতে সার্বিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ শতাংশের মধ্যেই আটকে রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট ডলার সংকট, সুদের হার বৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। আর বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়ার কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না। গত কয়েক বছর ধরে তা ৫ থেকে ৭ শতাংশের ঘরে আটকে আছে।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো নয়। এর প্রভাব জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে পড়বে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গোটা বিশ্বই কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। ডলার সংকট এখনো কাটেনি। আবার সংকোচন নীতির কারণে সুদের হারও বাড়ছে। দেশ থেকে অর্থপাচারও কমেনি। এসব কারণে আগামীতেও বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা রয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছিল ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, এবার বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছিল ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর তার আগের অর্থবছরে হয়েছিল ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এরপর টানা দুই অর্থবছর সেটি কমে ২৩ শতাংশে নেমে ২০২১-২২ অর্থবছরে আবার ২৪ শতাংশে ওঠে। গত অর্থবছরও তা ২৪ শতাংশের ঘরে থাকলেও এবার কমে আবার ২৩ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমলেও এবার সরকারি খাতে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে সরকারি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জন হয়েছে ৭ দশমিক ৭ ৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে জিডিপিতে সরকারি খাতে বিনিয়োগ হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর তার আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এটিই ছিল গত কয়েক অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগে গতি আসে। কিন্তু গত কয়েক বছর সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সেভাবে বাড়ছে না। ফলে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এবার বিনিয়োগের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে সার্বিক বিনিয়োগ ৩২ শতাংশের ঘরে উঠেছিল।

বেসরকারি বিনিয়োগ কমার প্রভাব দেখা যাচ্ছে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে সাময়িক হিসাবে অর্জনের হার ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৭ শতাংশের বেশি। কারণ ওই অর্থবছরে জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ২৪ শতাংশের ঘরে ছিল।

এদিকে গত সপ্তাহে ঘোষিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তবে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্য কমিয়ে ধরার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্য বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীররা।

এ বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যাংক যখন সরকারকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ পাবে তখন ব্যবসায়ীদের দিতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক। এতে করে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। বিগত বছরগুলোতে এমনিতেই বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে।

 

 

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য