সোমবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর
NBIU Spiring 2025 New Ad

বিদ্যুতে এলএনজির সঙ্গে বিকল্প জ্বালানি ভাবতে হবে

Paris
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাত গ্যাসনির্ভর। গ্যাসসংকটের কারণে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ খাতে এলএনজির নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের চেয়ে প্রায় ২৪ গুণ বেশি দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।

গত বছর মোট গ্যাসের ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জ্বালানি সরবরাহে গ্যাস ও এলএনজি বিতর্ক : বিদ্যুৎ খাতে এলএনজি আমদানির ব্যয়জনিত প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। অতিথি ছিলেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, ম. তামিম, সিপিডির পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আব্দুল্লাহ ফাহাদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ইমরান করিম, বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাসের হেড অব সেলস প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল প্রমুখ।

সিপিডির পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দেশে গত কয়েক বছর ধরেই গ্যাসসংকট। এই সংকট কাটাতে এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে এই সংকট ঘিরে আমরা দীর্ঘমেয়াদি এলএনজিনির্ভর হয়ে পড়ছি কি না তা ভেবে দেখা দরকার। যেসব খাতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, সেই খাতগুলোয় এলএনজিনির্ভর না হয়ে অন্য জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে ভাবতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। অন্য খাতগুলোয় বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেখানে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি আমদানির প্রয়োজন থাকবে আরো কিছুদিন। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের বিষয়টিকে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এই সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এলএনজি আমদানি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ এলএনজির দাম বেড়ে যায়। গত বছর অক্টোবরে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করতে ৩৬-৩৭ ডলারে যে চুক্তি হয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে তা কেনা যেত ছয় থেকে আট ডলারে। এ কারণে সরকারকে বড় ধাক্কা সামাল দিতে হয়েছে। ’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের চাহিদাও বেড়েছে। এই সময়ে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে সরকার এলএনজি আমদানি করছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমানে গ্যাস আমদানি ছাড়া বিকল্পও নেই। উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির কারণে অর্থনীতিতে তার চাপ পড়ছে। শেষ পর্যন্ত এই চাপ গিয়ে পড়ছে ভোক্তাসাধারণের ওপর। ’

মূল প্রবন্ধে আব্দুল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘গত অর্থবছরে ৪৬ শতাংশ প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ এসেছে গ্যাস থেকে। ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট সরবরাহের ১৯ শতাংশ আমদানি হয়। সিংহভাগ গ্যাস সরবরাহ হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে ও ক্যাপটিভ পাওয়ারে। গত বছর মোট গ্যাস সরবরাহের ৪২ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে। জাতীয় উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। বর্তমানে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। তবে আমাদের ক্যাপাসিটি রয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। আমাদের ৬৬টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট। ’

আব্দুল জলিল বলেন, ‘প্রথম দিকে স্পট মার্কেট থেকে আমরা এলএনজি আমদানি করিনি। ওমান ও কাতার থেকে চুক্তিভিত্তিক আমদানি করা হতো। যার দাম পড়ত আট থেকে ১০ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হয়। ওই অর্থবছরে মোট সরবরাহের ১৯.৫২ শতাংশ এলএনজি আমদানি করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের সিস্টেম লসকে বিবেচনায় নিতে হবে। পৃথিবীতে হাফ থেকে ১ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। সেখানে আমাদের সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ শতাংশ। বিদ্যুতেও সিস্টেম লস হচ্ছে। ’ এলপিজির মতো প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও তিন মাস বা ছয় মাস পর পর নির্ধারণ করার বিষয়ে চিন্তা করা হবে বলেও জানান তিনি।

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১১ হাজার ২৩০ মেগাওয়াট এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বন্ধ হয়ে যাওয়া ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যেতে পারে। কারণ নিউক্লিয়ার পরিবেশবান্ধব। ’

বদরুল ইমাম বলেন, ‘বিদেশি তেল-গ্যাস গবেষণা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে এখনো প্রচুর গ্যাস রয়েছে। তার পরও গ্যাস অনুসন্ধানে কারো মনোযোগ নেই। আগামী ১০ বছরে এলএনজি নির্ভরতা আরো বাড়বে। তাই অতি দ্রুত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ’

ম. তামিম বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন কমছে, সেটা জেনেও আমরা উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছি না। ২০২৩ সালের মধ্যে এই উৎপাদন আরো কমবে। দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি হচ্ছে। সরকারের যেসব কর্মকর্তা এলএনজি কিনছেন, তাঁদের আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে ধারণা কম। চুক্তিভিত্তিক এলএনজি কম কেনায় এখন উচ্চমূল্যে স্পট মার্কেট থেকে বেশি দামে এলএনজি কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা বিভিন্ন জ্বালানিতে যেতে পারি। ’

জাকারিয়া জালাল বলেন, ‘বিইআরসি যেহেতু এলপিজির দাম প্রতি মাসে নির্ধারণ করে দিচ্ছে, পাইপলাইন গ্যাসের দামও প্রতি মাসে না হলেও তিন থেকে চার মাসে একবার নির্ধারণ করে দিতে পারে। তা সম্ভব না হলে প্রতি সিজনের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। ’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ