ঢাকাই সিনেমার নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় বইছে বলিউডপাড়ায়। স্বামী সাখাওয়াত আলীম নোবেলের সঙ্গে কলহের জেরেই খুন হন নায়িকা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নোবেলের দেওয়া তথ্য এবং স্বজনদের বক্তব্যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
কী নিয়ে এই দম্পতির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল সেটি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শিমুর কী এমন ‘ভুল’ ছিল যে, তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে? শিমুর ভাইবোন ও স্বজনরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। সেই সঙ্গে নোবেলের বিচার দাবি করেছেন।
শিমুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে নাকি শ্বাসরোধে খুন করা হয়েছে, সেটি নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, দাম্পত্য কলহের জেরে নোবেল নিজ বাসায় শিমুকে হত্যা করেন। এ ময় পাশের কক্ষে তাদের দুই সন্তান ছিল। হত্যার পর মরদেহ দুটি বস্তায় ভরে ফেলে আসা হয় কেরানীগঞ্জে।
রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শিমুর লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সুহেল মাহমুদ যুগান্তরকে জানান, শিমুর গলায় দাগ পাওয়া গেছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে— তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ডিএনএ নমুনাসহ অন্যসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন কিনা, তা যাচাই করার জন্যও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ থেকে লাশ উদ্ধারের পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ শিমুর লাশ শনাক্ত করে। এর পর ঘটনাস্থল ও শিমুর গ্রিন রোডের বাসা থেকে অন্যসব আলামতের পাশাপাশি সাদা রঙের কিছু সুতা জব্দ করে পুলিশ। শিমুর লাশ মোড়ানো বস্তাটির সেলাইয়ের সুতার সঙ্গে বাসায় পাওয়া সুতার মিল খুঁজে পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়— নিজ বাসাতেই শিমু খুন হয়েছেন। এর পরই পুলিশ শিমুর স্বামী নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নোবেল খুনের দায় স্বীকার করে।
নোবেলের বরাত দিয়ে পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, ফরহাদের মালিকানাধীন ৩৪ গ্রিন রোডের ভবনের একটি ফ্ল্যাটে নোবেল ও শিমু থাকতেন। দীর্ঘদিন ধরে বেকার থাকার পর কিছু দিন আগে শিমু একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগে চাকরি নেন। নোবেলের সন্দেহ সেখানকার এক কর্মকর্তার সঙ্গে শিমুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নোবেল জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা নেশা করায় তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম। শনিবার মধ্যরাতে তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। দুজনের মধ্যে হাতাহাতির একপর্যায়ে শিমুর গলা চেপে ধরেন নোবেল। এতে শিমু নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল জানান, এ সময় পাশের রুমে তার ছোট সন্তান ঘুমাচ্ছিল। নোবেল জানান, শিমু যে মারা যাবেন তা তিনি বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, যখন তার গলা ছেড়ে দিই, তখন দেখি তিনি নিস্তেজ হয়ে গেছেন। এর পর সারা রাত লাশের পাশে বসে থাকি। পরে সকালে বন্ধু ফরহাদকে নিয়ে লাশ ফেলে রেখে আসি।
নোবেলের বন্ধু ফরহাদ সম্পর্কে পুলিশ জানায়, তিনিও নেশাগ্রস্ত। নোবেল ও ফরহাদ একসঙ্গে নেশা করেন। শাহবাগ এলাকায় বাসা হলেও বেশিরভাগ সময়ই নোবেলের সঙ্গে ফরহাদ সময় কাটান। ফরহাদের স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন। নোবেলকে শিমুর লাশ গুম করার পরামর্শ ফরহাদই দেন এবং লাশ ফেলতে সহায়তা করেন।
প্রসঙ্গত কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শিমুর। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের প্রায় ২৫টি সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাকে। শাকিব খান, অমিত হাসানসহ কয়েকজন তারকার সঙ্গেও কাজ করেছেন শিমু।
শিমু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় এবং প্রযোজনায়ও করেছেন।
সূত্রঃ যুগান্তর