ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জটিল রোগে আক্রান্ত ৪০০ শতাধিক বন্দি নিয়ে বিপাকে কারা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হলেও করোনার কারণে এখন তাদের গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো।
এরই মধ্যে ১৩ জন ভাগ্যবান বন্দি দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩ জন রেখে বাকি ১০ জনকে ফেরত নেয়ার তাগিদ দিয়েছে। এদিকে কারাগারের ভেতরে ১৭২ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা। একজন ডিপ্লোমা নার্স ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে হাসপাতালটি।
সূত্র বলছে, করোনা ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দিদের পাহারায় যেতে ভয় পাচ্ছেন কারারক্ষীরা। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন একজন বন্দিকে পাহারা দিতে গিয়ে ২১ জন রক্ষী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। ওই কারাবন্দি রোগী এখন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। ফলে দায়িত্ব বণ্টনে প্রতিদিনই বেগ পেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডাক্তার মাহামুদুল হাসান শুভ বলেন, এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ৯ হাজার বন্দি। এর মধ্যে কারা হাসপাতালে ভর্তি ৪০ জন ছাড়া আরও ৪০০ জন বন্দি নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তারা সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ফলোআপ প্রয়োজন। করোনার কারণে ওই হাসপাতালগুলো রোগীদের কিছু পরামর্শ দিয়ে হাসপাতালের গেট থেকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে। কারা হাসপাতালেও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দুটি-ই নষ্ট। নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। একটি এক্সরে মেশিন আনা হলেও বসানো হয়নি। সেটা আবার চালানোর জন্য নেই টেকনিশিয়ানও। ৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও একজনই দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, বিএসএমএমইউতে ১২ জন এবং ঢাকা মেডিকেলে একজন রোগী আছেন। এছাড়া মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যিনি ভর্তি, তিনি করোনায় আক্রান্ত। আসামি রোগীদের কথা বাদ দেন, সাধারণ রোগীদেরও ভর্তি নিচ্ছে না হাসপাতালগুলো। আজ (মঙ্গলবার) আমার একজন রিলেটিভ স্ট্রোক করেছেন। ৩-৪টি হাসপাতাল ঘুরেও তিনি ডাক্তার দেখাতে পারেননি।
সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জটিল রোগীরা পরামর্শের জন্য সাধারণত ঢাকা মেডিকেল, বিএসএমএমইউ, পঙ্গু,হৃদরোগ, চক্ষু ইন্সটিটিউট, কিডনি ও মানসিক হাসপাতালে গিয়ে থাকেন। করোনার মধ্যে ১৩ জন ভাগ্যবান বন্দি রোগীর মধ্যে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আছেন ডেসটিনির রফিকুল আমিন, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা সম্রাট ও জিকে শামীম। ওই হাসপাতালে আরও যারা চিকিৎসাধীন তাদের ফিরিয়ে নিতে কারাগার থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বন্দি ফেব্র“য়ারিতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার করোনা ধরা পড়ে। পালাক্রমে তাকে পাহারা দিতে গিয়ে ২১ কারারক্ষীও করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত আরও ৬৪ জন রক্ষীকে কোয়ারেন্টিনে রাখায় অন্য রক্ষীদের মধ্যে দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে কারা সদর দফতরের এআইজি মঞ্জুর হোসেন বলেন, সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে কারা হাসপাতালগুলোর জন্য ৬০ জন চিকিৎসক পাওয়া গেছে। তারা যোগদানও করেছেন। শিগগিরই তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হবে। জরুরি না হলে কাউকে চিকিৎসার জন্য আর বাইরে পাঠানো হচ্ছে না। তবে কারারক্ষীদের দায়িত্ব পালনে অনীহা বা হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এখনও কেউ অধিদফতরে অভিযোগ করেনি।
সুত্রঃ যুগান্তর