বাংলাদেশে আজ শুক্রবার পালিত হয়েছে আশুরা। মুসলমানদের কাছে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ইসলামের নবী মোহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হোসাইন এ দিনটিতে কারবালার প্রান্তরে এক যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। শিয়া মতাবলম্বীরা এ দিনটিকে অনেক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করে।
ঢাকার পুরনো অংশে অবস্থিত হোসাইনি দালান বা ইমামবাড়া বাংলাদেশে শিয়া মতাবলম্বীদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন এ ভবনটি।
প্রতি বছর আশুরার দিনে শত-শত মানুষ হোসাইনি দালানে জড়ো হয় সে দিনটিকে স্মরণ করতে।
আজ শুক্রবার আশুরা পালনের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা ছিল তাজিয়া মিছিল। ওই মিছিলে হাসান ও হোসেনের জন্যে নানাভাবে শোক প্রকাশ করা হয়।
তিন বছর আগে পুরনো ঢাকার এই ইমামবাড়ায় এক বোমা হামলা হয়েছিল, যাতে নিহত হয়েছিলেন একজন। তবে তিন বছর পর ওই ঘটনা নিয়ে মানুষজন এখন আর খুব একটা আর চিন্তিত নয়।
রিনা খাতুন প্রতি বছরই প্রার্থনার জন্য এখানে আসেন। নিজে সুন্নি মতাবলম্বী হলেও আশুরার দিনে এখানে আসতে কখনো ভুল করেন না তিনি।
“আমার মনের ভালোবাসা এবং টানের জন্য এখানে আসি,” বলছিলেন তিনি।
আশুরার দিনে হোসাইনি দালান ছাড়াও বড় ধরনের শোক মিছিল বের করা হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর এলাকায়। বোমা হামলার ঘটনার পর হোসাইনি দালানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
বিভিন্ন রাস্তায় শত-শত পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের ছিল কড়া পাহাড়া।
যারা ইমামবাড়ায় ঢুকেছেন তাদের প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হয়েছে।
আশুরার মিছিলে এক সময় নানা ধরনের ধারালো জিনিস ব্যবহার করা হলেও এখন সেগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। ইমামবাড়ার একজন সেচ্ছাসেবী মির্জা মোহাম্মদ তানজিল জানালেন, তিন বছর আগের বোমা হামলার ফলে যে ভয়ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল সেটা এখন আর নেই।
তিনি বলেন, “এখন সবকিছু নরমাল। যে রকম ছিল সে রকমই আছে। আমাদের এখানে সব মিলেমিশে।”
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শিয়া এবং সুন্নি মতাদর্শের মধ্যে প্রবল বিরোধ দেখা গেলেও বাংলাদেশ বরাবরই এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কিন্তু বোমা হামলার পর আশংকা দেখা দিয়েছিল যে উভয় মতাদর্শের মধ্যে সেটি অটুট থাকবে কিনা? শিয়া এবং সুন্নিরা বলছেন, সে রকম কিছুই ঘটেনি। তবে শিয়া সম্প্রদায়ের জুবায়ের মনে করেন তারা মিথ্যা প্রচারণার শিকার এবং অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করার চেষ্টা করে।
মি: জুবায়েরের বর্ণনায়, “আমরা যা কারি না সেটা যখন বলা হয়, তখন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যারা জঙ্গি বা উগ্রবাদী তারা একটা সুযোগ পায়,”
ইমামবাড়ায় যারা আসছেন তাদের অনেকের সাথে কথা বলে বোঝা গেল শিয়া এবং সুন্নি মতাদর্শের মধ্যে কোন পার্থক্যও তারা বোঝেন না।
সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায় বরাবরই তাদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের কোন বাধার মুখে পড়েনি।
ইমামবাড়ার মতো জায়গাগুলো শিয়াদের তত্ত্বাবধানে থাকলেও সুন্নি মুসলিমদের অনেকই এসব জায়গাকে তাদের ধর্মীয় আবেগ থেকেই বিবেচনা করেন।
তিন বছর আগের হামলা এ বিশ্বাসে কোন ফাটল ধরাতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে।
স/আন