মনিরুজ্জামান শেখ রাহুল
আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের অশ্রুঝরা ও বেদনাবিধুর দিন। হৃদয়বিদারক শোকের দিন আজ। এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৩ তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে কিছু দৃর্বৃত্ত এসে অমানবিকভাবে হত্যা করে এই মহান নেতাকে। সেদিন তারা শুধু এই অবিসংবাদি নেতাকে হত্যা করে নি, তাঁর পরিবারের অনান্য সদস্যদেরও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেদিন প্রাণ হারাতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সহ তাঁর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, সন্তান শেখ জামাল, শেখ কামাল, শিশু রাসেল ও দুই পুত্রবধু। ঘাতকেরা যখন পরিবারের সবাইকে হত্যা করল, তখন ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল কিন্তু তাদের পশুত্ব মনোভাবের জন্য সেই শিশুটিও রক্ষা পায়নি। এই রকম নৃশংস্য হত্যকান্ড থেকেও বাঁচতে পারে নি বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্ণেল জামিল সহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য। সেজন্য দেশের মানুষের কাছে আগস্ট মাসটি শোকের মাস হিসেবে পরিনত হয়েছে। এই শোকাবহ আগস্ট বেদনাবিধুর ও বিভিষিকাময়।
পঁচাত্তরের এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে ঘাতকেরা কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। সেই জঘন্য হামলার পরক্ষণে দেখা যায় ভবনজুড়ে বিভিন্ন স্থানে অর্থ্যাৎ দেয়ালে, মেঝেতে , জানালার কাঁচে রক্ত লেগে আছে, সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মগজ ও হাড়ের গুড়া। যেন স্থানটি হয়ে উঠেছিল রক্তের সাগর। সে সময় রক্তের গঙ্গা বয়ে যায় পুরো বাড়িতে। প্রথম তলার সিঁড়িতে পড়েছিল চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর লাশ। তলপেট ও বুক ছিল বুলেটের আঘাতে ঝাঝড়া। পাশেই ছিল তাঁর ভাঙ্গা চশমা। অর্ভ্যথনা কক্ষে শেখ কামাল, মূল বেডরুমের সামনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বেডরুমে শেখ জামাল, রোজি জামাল, সুলতানা কামাল, নীচতলার বাথরুমে শেখ নাসের ও বেডরুমে দুই ভাবির মাঝখানে চিরনিদ্রায় শায়িত ছিলেন শিশু শেক রাসেল। শিশু শেখ রাসেলের রক্তাক্ত লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে বিশ্বের মানবাতাবাদী সকল মানুষ। এই অমানবিক হামলা চালিয়ে ঘাতক দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। যা বাঙ্গালির জাতির বেদরনাময় ও মর্মান্তিক দিন। এই দিনে বাঙ্গালি জাতি এক মহান নেতাকে হারায়, যার নেতৃত্বে বাঙ্গালি জাতি এই স্বাধীন দেশ পেয়েছে।
তবে বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্যকন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা,ৎ ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহেনা দেশের বাইরে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। সে সময় দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, সন্তান ও ছোট বোনকে নিয়ে জার্মানির কালর্সরুইয়ে ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সংগ্রামী। তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহন করেন। দেশের বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে সংগ্রামী নেতা হয়ে কাজ করেছেন ও তিনি এদেশের জনগণের নিকট আশা ও আকঙ্খার প্রতিক হিসেবে রুপায়িত হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে দাড়িয়ে তিনি বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” সেদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ বজ্রমুষ্ঠ হয়েছিল। দেশকে স্বাধীন করার প্রেরনায় ঘর ত্যাগ করে রণক্ষেত্রের দিকে ধাবিত হয়েছিল বাঙ্গালির বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বর্ষণস্নাত শ্রাবন মিলেছিল অশ্রুর প্লাবনে। গগণও বুক ফেটে কেঁদেছিল, চোখে ছিল রক্তজল। ঘোর শর্বরীর থেকেও অভিশপ্ত ছিল ১৫ আগস্ট। জাতির পিতাকে হারানোর সেই শোক জেগে আছে বাংলাদেশের রক্তরাঙ্গা পতাকায়। বঙ্গবন্ধুর রক্ত মেখে পূর্ব আকাশে সূর্য উঠে প্রতিনিয়ত। এই রক্তিম সূর্য আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুর অমর বানীসমূহ, স্মরন করিয়ে দেয় শরীরে শিহরন জাগানো সেই ৭ মার্চের ভাষণ। বিশ্বের ইতিহাসে কোন ভাষণ কোন দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে পারে নি। কিন্তু ১৯৭১ সালের সেই ৭ মার্চের ভাষণের অনুপ্রানিত হয়ে প্রাণপন দিয়ে বাঙ্গালি জাতি যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। তিনি অবিসংবাদি নেতা হয়ে উঠেন রাজনীতিতে আত্মত্যাগ ও জনগণের মমত্ববোধের কারনে। তিনি আমাদেরকে দিয়ে গেছেন স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র এবং সবুজ শ্যামল ভূমির উপর সূর্যরুপ লাল পতাকা। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মহান নেতাদের একজন বঙ্গবন্ধুর অমর স্থপতি এই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।