সোমবার , ৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

স্থগিত বিদেশি ঋণ স্থিতি ৮২৬২ কোটি টাকা

Paris
নভেম্বর ৪, ২০২৪ ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

বেসরকারি খাতে স্থগিত করা বৈদেশিক ঋণের স্থিতি কমতে শুরু করেছে। ঋণ ও সুদের বোঝা কমাতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপকভাবে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছে। এতে কমছে সব ধরনের ঋণের স্থিতি। গত সরকারের শেষ সময়ে জুলাইয়ে এ খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে এসেছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে। স্থানীয় মুদ্রায় ৮ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে স্থগিত ঋণ কমেছে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, স্বল্পমেয়াদি ঋণের বড় অংশই বেসরকারি খাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করোনার সময় ও এরপর ডলার সংকটের কারণে এসব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে দফায় দফায় ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে ঋণের স্থিতি বেড়েছে। এসব ঋণের শতভাগেরই সুদের হার ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক। অর্থাৎ যখন পরিশোধ করতে হবে সেই হারে সুদ দিতে হবে, যখন ডলারের যে দাম সেই দামেই ডলার কিনে পরিশোধ করতে হবে। গত আড়াই বছরে ডলারের দাম বেড়েছে গড়ে ৩৫ টাকা। আগে ছিল ৮৫ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। ফলে ঋণের বিপরীতে প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা বেশি দিয়ে। তবে ঋণ যে সময়ে নেওয়া হয়েছে সেই সময়ের ডলারের দাম থেকে পরিশোধের সময়ের দাম বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে। এতে ঋণের কিস্তি স্থগিত করায় ঋণের স্থিতি বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সুদের হারও বেড়েছে। আগে সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। দুভাবেই টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে আমদানির বিপরীতে। এর কিছু অংশ নেওয়া হয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে। এসব ঋণের একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে কিছু ঋণ খেলাপিও হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্দে কয়েকটি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের (বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বিতরণ) ঋণ দিয়ে এলসি খোলা হলেও পণ্য দেশে আসেনি। ওইসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। ফলে গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন তৈরি করে ব্যাংক বৈদেশিক ঋণ শোধ করেছে।

এসব ঋণ ডলারে নেওয়া হয়েছে, পরিশোধও করতে হবে ডলারে। তবে পরিশোধের সময় বাড়তি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হবে। তারপর ওইসব ডলার দিয়ে স্থগিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে ডলারের দাম বাড়ায় বাড়তি ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ঋণের চুক্তি অনুযায়ী যখন যে হারে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদ থাকে ওই হারে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেশি। এ কারণে বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে ডলার কেনা ও বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে হওয়া দুই দিক থেকেই দেশকে দণ্ড দিতে হচ্ছে। এছাড়া কিছু ঋণের বিপরীতে বাড়তি ফি বা চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগে বাংলাদেশকে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে বাড়তি চার্জ বা কমিশন পরিশোধ করতে হতো না। কারণ ঋণের কিস্তি নিয়মিত ছিল। এখন ঋণের কিস্তি নিয়মিত শোধ করতে না পারায় বাড়তি কমিশন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ২০২০ সালে কমিশন বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬৯ লাখ ডলার। ২০২১ সালে তা বেড়ে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে তা আরও বেড়ে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার হয়। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে। ওই চার বছরে বাংলাদেশকে ৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের কমিশন পরিশোধ করতে হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯১৫ কোটি টাকা। ঋণের কিস্তি পরিশোধে দেরি হওয়ার কারণেই কমিশন পরিশোধ করতে হচ্ছে।

২০১৪ সালে স্থগিত বকেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৪০ কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। ২০১৬ সালে তা আবার কমে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ওই বছর আগের বকেয়া মোটা অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল। যে কারণে স্থিতি কমে আসে।

২০১৭ সালে স্বল্পমেয়াদি স্থগিত বকেয়া ঋণের স্থিতি আবার বেড়ে ৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে আবার কমে ৩৯ কোটি ১৪ লাখ ডলারে স্থিতি হয়। ২০১৮ সালে আবার কমে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।

২০২০ সালে করোনার সময় বৈশ্বিকভাবে লকডাউন থাকায় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই সময়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ ছিল। ওই সময়ে ডলারের প্রবাহ বেশি ছিল। ফলে ডলারের দাম ৫ পয়সা কমে যায়। ওই বছরে ঋণের স্থিতি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। এর পর থেকে এ ঋণের স্থিতি আর কমেনি। বরং বেড়েই গেছে। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। করোনার পর ২০২২ সালে এসেছে বৈশ্বিক মন্দা। এর প্রভাবে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। যা নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন কিছুটা কমেছে। যে কারণে এখন ঋণ শোধ করা হচ্ছে বেশি।

ডলার সংকটের সময়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ ব্যাপকভাবে স্থগিত করায় স্থিতি বেড়ে যায়। ওই সময়ে তা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় কিছু ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হয়। ফলে স্বল্পমেয়াদি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে ডলার সংকট আরও হলে ঋণের কিস্তি পরিশোধ আরও বেশি মাত্রায় স্থগিত হয়ে যায়। এতে ঋণের স্থিতি বেড়ে ৮৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর স্থিতি আরও বেড়ে ৮৯ কোটি ১১ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। গত সরকার ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে।

এর আগের মাসে জুলাইয়ে ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ঋণের বাড়তি সুদ ও মূল ঋণের বোঝা কমাতে নতুন সরকার স্বল্পমেয়াদি স্থগিত ঋণ পরিশোধে জোর দেয়। আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে। ফলে ঋণের স্থিতি কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অক্টোবরে আরও ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে ঋণের স্থিতি আরও কমে যাবে।

 

সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য