নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
সৌদি আরবের একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত ৪ বাংলাদেশি শ্রমিকের বাড়ি নাটোরের খাজুরা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। খবর পাওয়ার পর নিহত চারজনের বাড়িতে চলছে আহাজারি। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দ্রুত নিহতের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
- ভিটেমাটি বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দেড় বছর আগে দুর দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২০)। সংসারের একমাত্র উপার্জনশিল ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সাদ্দামের পরিবার।
সাদ্দামের মা ছামেনা বেগম বলেন, জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে দেড় বছর আগে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠাই। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে শুনেছি ছেলে যেখানে কাজ করত সেখানে আগুন লেগে পুড়ে মারা গেছে। আমার সংসারের সব শেষে হয়ে গেল।
আহাজারি করতে করতে সাদ্দামের বোন ছবিলা খাতুন বলেন, আমার ভাইকে দেশে ফিরত চাই। যতদ্রুত সম্ভব সরকার তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসুক। সেই সাথে সরকারের কাছে ক্ষতিপুরন দাবি করছি।
- খাজুরা গ্রামের শুধু সাদ্দামের পরিবারে নয়, একই অবস্থা আব্দুল ওহেদ ওরফে ওয়াসিম, আমিনুল ইমলাম এবং জামাল মোল্লার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকে বিহবল হয়ে পড়েছে নিহতের স্বজনরা।
সকাল ১১টায় আব্দুল ওহেদ ওরফে ওয়াসিমের নিহত হওয়ার খবর শুনে বাড়িতে ভরে গেছে আত্মীয়-স্বজনরা। ওয়াসিমের পাচ মাসের ফুটফুটে কণ্যা সন্তান আয়েশা খাতুনের মুখের হাসি তখনও মলিন হয়ে গেছে। বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে তখনও বুঝতে বাকি নেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন তার বাবা।
- ওয়াসিমের সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলে রিপন হোসেন বলে, আমাদের এখন একটাই চাওয়া বাবার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।
ওয়াসিমের স্ত্রী আহাজারি করতে করতে বলেন, ঋণ করে ১২বছর আগে সেৌদি আরবে যান। সেখানে একটি সোফা তৈরীর কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু রাতে হঠাৎ করে তার মৃত্যুর খবর শুনেছি।
- তিনি আরো বলেন, দেশে আসার জন্য ছেলে এবং মেয়ের জন্য জামা-কাপড় কিনেছিল। কিন্তু তার আর দেশে ফিরিয়ে আসা হলনা। এখন দুইটি সন্তান নিয়ে কোথায় যাব-কি করব।
খাজুরা ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিল্কসিটি নিউজকে জানান, নিহতরা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের পুরাতন শহর হারাজ বিন কাশেম মানফুহা এলাকায় সোফা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন।
- বুধবার বিকেলে কাজ করার সময় এয়ারকুলারে বৈদ্যুতিক শটসার্কিটে আগুন ধরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তার আগেই পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়।
তিনি আরো জানান, রাতে নিহতদের পরিবার তাকে এ খবর জানায়। এ খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকে জানান, প্রাথমিক ভাবে জেলা প্রশাসক সহ অন্যদের জানানো হয়েছে। লাশ যাতে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স/আর