সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সিরিয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা ও তুষারপাতে সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বেসামরিক সিরীয়রা আলেপ্পো ছাড়াও অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে বেরিয়ে আসছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিদ্রোহী ও সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার ছবি প্রচারিত হয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিদ্রোহী নিয়ন্তিত ইদলিব প্রদেশের শিয়া অধ্যুষিত দু’টি গ্রাম কেফরায়া ও ফুয়া থেকে তিন হাজার মানুষকে বের করে নিয়ে আসার জন্য রাতভর ৬০টি বাস দাঁড়িয়েছিল। খাবার-পানি ছাড়া তুষার আচ্ছাদিত ইদলিবে তাদের ওই ২৪ ঘণ্টা কেটেছে তীব্র কষ্টে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় বিনা খাদ্য ও ওষুধে চারটি শিশু মারা গেছে।
একদিন অপেক্ষার পর বুধবার ওই তিন হাজার মানুষের মধ্যে কয়েকজনকে ওই দু’টি গ্রাম থেকে বের হয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। পাঁচটি বাস সরকার নিয়ন্ত্রিত রামোসেহ শহরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
সিরিয়ান অবজারভেটরি আরও জানিয়েছে, আলেপ্পোর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সব জেলা সরকারি বাহিনীর দখলে এসেছে। তবে তা জাতিসংঘ এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রেড ক্রিসেন্ট ও রেড ক্রসের নজরদারিতে আলেপ্পো থেকে বেসামরিক মানুষদের সিরিয়ার পশ্চিমে সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সানা নিউজ এজেন্সি আরও জানিয়েছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের কেফরায়া ও ফুয়া থেকে চারটি বাস ও দু’টি অ্যাম্বুলেন্সে করে বেসামরিকদের সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থাটি জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে বিদ্রোহীদের দ্বারা আটক ২১ জন বাস চালককে বুধবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এটা এখনও নিশ্চিত নয় যে, ইদলিবের ওই দু’টি গ্রামে কতোজন বেসামরিক মানুষ রয়েছেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে তাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ জানিয়েছিল আলেপ্পোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছেন। মঙ্গলবার রেড ক্রস জানিয়েছিল ২৫ হাজার মানুষকে তখনই সরিয়ে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বেসামরিক ও বিদ্রোহীদের সরিয়ে নেওয়ার পর সেনাবাহিনী আলেপ্পোর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে প্রবেশ করবে।
বিদ্রোহীদের একাংশ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছে, তারা বেসামরিকদের জীবন নিশ্চিত করার পরই সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে আলেপ্পো ছিল একটি শিল্প নগরী। ২০১২ সালে বিদ্রোহী নগরীর একাংশ দখল করার পর থেকে নগরীটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। তখন থেকেই পূর্ব আলেপ্পো রয়েছে বিদ্রোহীদের দখলে আর পশ্চিম আলেপ্পো প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সরকারি বাহিনীর দখলে।
সম্প্রতি রাশিয়া ও মিত্র শক্তিগুলোর সহায়তায় সরকারি বাহিনী হামলা জোরদার করার পর কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিদ্রোহীরা। এক পর্যায়ে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্ততায় অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে রাজি হয় সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীরা। এর ভিত্তিতেই বেসামরিক ও বিদ্রোহীদের আলেপ্পো থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। অপরদিকে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের অবরুদ্ধ কেফরায়া ও ফুয়া থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের বেরিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হয়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন