আমানুল হক আমান, বাঘা:
এমপিওভূক্তির আসায় সাড়ে ১১ বছর যাবত বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু আর কতদিন বিনা বেতনে চাকরি করে এভাবে চলা যায়। অগত্য উপায়ন্তর না দেখে সেই শিক্ষক এখন ধরেছেন অটোরিকশার হ্যান্ডেল।
তিনি হলেন, মোহাম্মদ ফিরোজ আল আজাদ (৩৮)। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর হাইস্কুলের কারিগরি শাখার ফ্রুট এ্যান্ড ভ্যাজিটেবুল কাল্ট্রিভেশন বিষয়ের ট্রেড ইন্সটাক্টর তিনি।
তবে ওই স্কুলটি এখনো এমপিওভূক্ত না হওয়ায় গত প্রায় ৭ মাস থেকে কিস্তিতে বেটারি চালিত ইজিবাইক (অটো) কিনে রাস্তায় চালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফিরোজ আল আজাদ।
- এই শিক্ষক সকাল থেকে স্কুলের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তায় এ কাজ করেন। তবে তিনি প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে স্কুলে আসেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে রুটিন মোতাবেক ক্লাস নিয়ে রাস্তায় ইজিবাইক নিয়ে আবার বের হন।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারের তালতলায় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার সাথে কথা হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তার দুঃখের কথা বলেন। তিনি বিবাহিত। কোলজুড়ে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সাব্বির হোসেন নামের পুত্র সন্তান বর্তমানে স্থানীয় পাইমারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।
তারা দুই বোন ও চার ভাই। ভাই বোনদের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাবা বেচে থাকা অবস্থায় স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ২০০৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী যোগদান করেন। তার কিছুদিন পর বাবা মারা যান। এর মধ্যে জমি ভাগ হয়ে যায়। পাশাপাশি সবাই আলাদাও হয়ে যায়। ফলে তিনি নিরুপায় হয়ে পড়ে।
- এ সময় তিনি কোনো উপায় না পেয়ে বাবার রেখে যাওয়া ৩৩ শতাংশ জমি ভাগে পায়। এই জমি অন্যের কাছে ৪২ হাজার টাকায় বন্ধক রাখে। পাশাপাশি গ্রামীণ বাংক থেকে এক লক্ষ টাকা কিস্তিতে নিয়েছেন। এই টাকা দিয়ে সাড়ে ছয় মাস আগে ইজি বাইক (অটো) কিনেন। এই ইজিবাইক তিনি আড়ানী-বাগাতিপাড়া, আড়ানী-পুঠিয়া, আড়ানী-বাঘা, আড়ানী-চারঘাট, আড়ানী-দিঘা রাস্তায় চালান।
তিনি পাঁকা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দোডাংগি গ্রামের মৃত জাফর উদ্দীনের ছোট ছেলে। তার চার সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন তার আয় হয় সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
তবে প্রতিমাসে কিস্তি দিতে হয় ১০ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে মাসিক কিস্তি, ছেলের স্কুল ও সংসারের খরচের পাশপাশি অসুস্থ্ মা হাজেরা বেগমের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয় আজাদকে।
- সরকারের কাছে তিনি স্কুলের কারিগরি শাখাটি এমপিওভূক্ত করার দাবি জানান। স্কুলটির কারিগরি শাখা ২০০১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী অনুমোদন হয়েছে। তবে ১৬ বছরেও শাখাটি এমপিওভূক্ত হয়নি। ফলে কারিগরি শাখার শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাবন করছে।
শিক্ষক মোহাম্মদ ফিরোজ আল আজাদ বলেন, কোন উপায় না থাকায় এ কাজে নামতে বাধ্য হয়েছি। তবে এলাকায় লোকজন রিজাফ ভাড়ার প্রয়োজন হলে ফোন করে আমাকে ডেকে নেই। রাস্তায় আমাকে দেখলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আগ্রহ করে গাড়িতে উঠে। ফলে দিনে সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে বর্তমানে ভালো ভাবে সংসার চলছে।
তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন কোন কাজকে ছোট না ভেবে সব সময় স্বামীকে সহযোহিতা করেন বলে জানান।
স্কুলের কারিগরি শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমায়ন কবীর, সুজন আলী ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুলিয়া খাতুন, জেসমিন নাহার জানায়, স্যার ইজি বাইক চালালেও ক্লাস মিস করেন না। ক্লাস শেষে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ভাড়া মারেন তিনি।
- স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আসলাম আলী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এই শিক্ষকের পারিবারিক অবস্থা ভালো না। ক্লাস শেষে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভাড়া মারে। তবে সে ক্লাস কামাই করেনা।
পাঁকা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মুজিবর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডে তার বাড়ি। কাজকে ছোট না ভেবে একজন স্কুল শিক্ষক এ কাজটি করায় এলাকায় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকরা তার উদারহণ দিতে দেখা যায়।
স্কুলে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এমপিও দেয়নি সরকার। আমার প্রতিষ্ঠানের কারিগরি শাখা অনেক আগেই সকল সর্ত পূরণ করেছে। সরকার এমপিও ছাড় দিলে এই স্কুল এমপিওভূক্ত হবে আসা করছি।
স/আর