বৃহস্পতিবার , ১৩ জুন ২০২৪ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

শাহিন-মিন্টু ফোনালাপে খুনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি

Paris
জুন ১৩, ২০২৪ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে; ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে নেপথ্য কুশীলবদের নামধাম। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে থাকা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর বিষয়েও আসছে নতুন তথ্য।

পুলিশের তদন্তকারীদের তথ্যমতে, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের অভিজাত একটি ফ্ল্যাটে গত ১৩ মে খুন করা হয় এমপি আনারকে। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন ওই ফ্ল্যাট থেকে ফোন করেন মিন্টুকে। সেই ফোনালাপেই আনার হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানানো হয় তাকে।

অন্যদিকে শাহিনের সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাসবাবুর কথা হয় যে তিনটি মোবাইল ফোনে, সেই ফোনগুলো নিজ হেফাজতে নিয়ে নেন মিন্টু। এর পর ফোনগুলো হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি করেন গ্যাসবাবু। গত মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে আটক করা হয় মিন্টুকে। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে নাকি ছেড়ে দেওয়া হবে- এ বিষয়টি গতকাল পর্যন্ত খোলাসা করেনি পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেট মিলে এমপি আনারকে হত্যা করেছে বলে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তিগত প্রমাণের ভিত্তিতে বলছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অন্যদিকে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেছেন, আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে বড় জায়গা থেকে তদবির হচ্ছে। বিষয়টি দেখার জন্য তাই তিনি গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎপূর্বক অনুরোধ করেছেন।

আনারকে হত্যার সময়কার একটি ছবিতে দেখা যায়, বিবস্ত্র অবস্থায় চেয়ারে বসানো আনারের গলায় একটি লাল গামছা পেঁচিয়ে সেটি চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাধা। মুখের মধ্যে সাদা কাপড় গুঁজে দেওয়া, যার অন্য অংশটি বাধা চেয়ারের সঙ্গে। এ ছাড়া কপালে কালো ফিতা দিয়ে চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে। দুই হাতের কব্জি ও কনুই শক্ত করে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ছবিতে আনারের চেহারায় ‘মৃত্যু-আতঙ্ক’ ফুটে উঠেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা থেকে আনার খুনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মাস্টারমাইন্ড শাহিন আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে ফোন করেছিলেন। ফোনে ২ কোটি টাকা রাখতে বলেন। ফোনের এ প্রান্ত থেকে মিন্টু তাকে জানান যেন দেশে এসে গ্যাসবাবুর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। শাহিন ও আমানুল্লাহ দেশে আসামাত্র ২০ লাখ টাকা গ্যাসবাবুর কাছ থেকে নেওয়ার কথাও বলেন। আর খুনের বিষয়াদি নিয়ে সব সময় গ্যাসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। অন্যদিকে যে তিনটি ফোনে গ্যাসবাবু নিয়মিত কিলার আমানুল্লাহ ও মাস্টারমাইন্ড শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তা কী করা হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। পরে মিন্টু তিনটি ফোন তার কাছে জমা দিয়ে হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী গ্যাসবাবু থানায় জিডি করেন। ওই ফোনগুলোর বিষয়ে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্যাসবাবুর কাছে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণের পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইদুল করিম মিন্টুকে ডাকা হয়েছে। মিন্টুর কাছে তথ্যগুলো জানতে চাওয়া হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যদি মিন্টু সদুত্তর দিতে পারেন, তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মিন্টু যদি কোনো সদুত্তর দিতে না পারেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তখন আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন কাউকে নিয়ে আসি তখন অবশ্যই কিছু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি থাকে। প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই আমরা বাবুকে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু অকপটে স্বীকার করেন যে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন। শিমুল ভূঁইয়া গ্যাসবাবুকে এমপি আনার হত্যার পর ছবি দেখিয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের পর ১৬ মে সাইদুল করিম মিন্টু ও গ্যাসবাবু জেনেছিলেন। তাদের মোবাইলে হত্যাকাণ্ডের ছবিও এসেছিল। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলে কেন সেই সময় বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি? হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানানোও অপরাধ। রিমান্ডে থাকা বাবু ও আটক মিন্টুকে এসব বিষয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না।

কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না মন্তব্য করে হারুন অর রশীদ বলেন, অনেকের সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর সঙ্গে যে বা যারাই যে কোনোভাবে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে কারও প্ররোচনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।

আনারকন্যা ডরিন বলেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু চাচাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে। অবশ্যই তাদের কাছে সত্যিকারের কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে, সেই সাপেক্ষেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই- গ্যাসবাবু নামে যাকে আটক করা হয়েছে, তিনি আমার বাবার প্রতিপক্ষ নন। আমাদের সঙ্গে তার কোনো শত্রুতাও নেই। তবে তাকে আটকের আগে থানায় তিনি জিডি করেছেন যে, তার তিনটি ফোন হারিয়ে গেছে। একই দিন একজন মানুষের তিনটি ফোন কীভাবে হারিয়ে যায়, সেটিও আমার প্রশ্ন।

আনার হত্যাকাণ্ডে ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া। তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। মিন্টুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার। এ ছাড়া কাঠমান্ডুতে আটক সিয়াম হোসেনকেও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ - জাতীয়