সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে বলেন, মাদারীপুরের অবস্থা খুব খারাপ। শাজাহান খান সবকিছু ‘ফ্রি স্টাইলে’ চালাচ্ছেন। মন্ত্রী ‘দানব’ হয়ে উঠেছেন। তাঁর হাত থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচান। নতুবা তাঁকে (বাহাউদ্দিন) যেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকমণ্ডলীর এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে একাধিক নেতা নিজ এলাকায় বিবদমান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মামলা, হামলা ও হয়রানির অভিযোগ আনেন। মন্ত্রীদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। তবে কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
শাজাহান খান আর বাহাউদ্দিনের বাড়ি মাদারীপুর সদরে। এ দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছে। শাজাহান খান সদর আসনের সাংসদ। বাহাউদ্দিন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কালকিনি থেকে সাংসদ হন। সেখানে আগে সাংসদ ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। গত বুধবার মাদারীপুরে শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিনের সমর্থক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পুলিশের দুজন সদস্যসহ ১৫ জন আহত হন। পুলিশ ও র্যাব টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে ২ জুলাই দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, বাহাউদ্দিনের ক্ষোভ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাদারীপুরের বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। বাহাউদ্দিনকে মাদারীপুরের সমস্যা নিয়ে দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, শাজাহান খান শ্রমিক লীগকে শেষ করে দিয়েছেন। তিনি আলাদা শ্রমিক সংগঠন করেছেন। শ্রমিক লীগের অনুষ্ঠানেও যান না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। আর বাহাউদ্দিন নাছিম রুদ্ধদ্বার বৈঠকের বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
বাহাউদ্দিন বক্তৃতা করার পর আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করে বক্তৃতা করেন। দলের নেতাসহ অন্যদের ‘রাবিশ’ বলা এবং বাজেট নিয়ে হওয়া সমালোচনার প্রসঙ্গ তোলেন। মেজবাহ উদ্দিন অর্থমন্ত্রীর আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন সম্প্রতি। এরপর আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, তাঁর এলাকায়ও ‘ছোট দানব’ আছে। দলের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। আহমদ হোসেনের বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি কেন্দ্রীয় নেতা হলেও দলের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচন করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ঈশ্বরদীতে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমানের ছেলে শিরহান শরীফকে গ্রেপ্তারের পর মন্ত্রী দলের অন্য নেতাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তিনি ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদকে হয়রানি করছেন।
আবুল কালাম আজাদ মন্ত্রীর মেয়ের জামাই। কিন্তু জামাই-শ্বশুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। এর জের ধরেই ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শরিফ ছাত্রলীগের এক নেতার বাড়ি ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবশ্য পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই অভিযোগ করেন, দলের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান রংপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নিজের মতো করে রাজনীতি করছেন। তিনি দলে শৃঙ্খলা আনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির ভিশন ২০৩০ দেখেছি। সহায়ক সরকারের বিষয়ে তিনি বলছেন, বলবেন। সবার সবকিছু বলার স্বাধীনতা আছে।’ খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন বলে আলোচনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘তাঁরা সময় বুঝে ভারতপ্রীতিও করে, ভারতভীতিও করে। যেহেতু নির্বাচনী হাওয়া বইছে, সে কারণে ইদানীং তাঁদের মধ্যে ওপরে ওপরে ভারতপ্রীতি দেখা যাচ্ছে। ভেতরের কথা আমি বলতে চাই না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আবদুর রহমান; সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মহিবুল হাসান চৌধুরী; প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর; উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
সূত্র: প্রথম আলো