নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা আন্দোলনে ফিরে বন্ধ করে দিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নগর ভবনই নয় বন্ধ করা হয়েছে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। এ নিয়ে দর্শনার্থীরা পড়েছে বিপাকে। শুধু তাই নয় রাসিক হারাচ্ছে রাজস্ব। অন্যদিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাসিকের পরিবহন শাখা (গ্যারেজ)।
এনিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকটাই অলস সময় পার করলেও তাদের কর্ম ক্ষেত্রেই সময় দিচ্ছেন। অন্যদিকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় কর্মীচারীরা তাদের নিজ নিজ কাজ করছেন। তবে মূল ফটকে তালা দেওয়া দর্শনার্থীরা ঢুকতে পাড়ছেনা ভেতরে। এমনটি সিল্কসিটিনিউজকে বলছিলেন, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান চিড়িয়াখানার সুপার ভাইজার আদুল খালেক।
তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতোই সকালে গেট খোলা হয়। পরে রাসিকের শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি দুলাল শেখ ও অন্যরা এসে তালা দিয়ে চলে যায়। এবং বলে যায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গেট খোলা হবে না। তবে পশু-পাখিদের খাবার নিয়ে আসার জন্য একটি গেট খোলা আছে। তবে ভেতরে দর্শনার্থীরা ঢুকতে পড়ছে না।
তিনি আরো বলেন, এখন থেকে রাসিক প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার টাকা আয় করে। এ বছর ঈদের পরে সাত দিন ২০ লাখ প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে সাত রাখ টাকা বেশি। এভাবে বন্ধ থাকলে রাসিক হারাবে অনেক টাকা রাজস্ব। এখনে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ৬৫জন। তারা তাদের নিজেদের কাজ করছেন।
বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে কথা হয় মো. নয়ন ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম নামের দুই দর্শনার্থীর সঙ্গে। তারা সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, তাদের বাড়ি বগুড়া। পরিবারের চার জন সদস্য দিয়েে এসেছিলেন বেড়াতে। কিন্তু এসে দেখছেন চিড়িয়াখানা বন্ধ। তাই তারা অনেকটাই বাধ্য হয়ে বেড়াতে গেলেন পদ্মা পাড়ে।
তিনি আরো বলেন, কোন দিন শুনিনি যে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে, এখানে এসে দেখলাম এই অবস্থা। বাড়ির অন্য সদস্যদের অনেক দিনের আসা ছিল তাই ভেতরে বেড়াবো। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান চিড়িয়াখানার মনিটরিং অফিসার শেখ আবু জাফর সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, এটা দুঃখ জনক। যে রাজশাহীর সবার প্রিয় মানুষের নামের কেন্দ্রীয় উদ্যানটি আজ বন্ধ। এখানে অনেক মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছে। আমরা এই কেন্দ্রীয় উদ্যানের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরুকে বলেছি।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় উদ্যানের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, এটা অফিসিয়ালি কোন কাজের জায়গা না। এটা জনসাধারণের চিত্ত-বিনোদনের জায়গা । তাদের দাবি থাকলে তারা অফিসিয়ালি বলুক। একটা তো বন্ধ করার কোন প্রয়োজন নেই।
তিনি আরো বলেন, যারা অন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। দেখা যাক কি হয়। তবে তারা অন্দোলন করলে অফিসে করুক। বিনোদনের জায়গায় এ ভাবে বন্ধ করে রাখলে রাসিকের ক্ষতি। শুধু তাই-ই নয় দুপুর দুইটার দিকে রাসিকের পরিবহন শাখা (গ্যারেজ) গিয়ে দেখা গেল প্রধান ফটকে তালা। ভেতরে অলস অবস্থায় বসে আছে কর্মচারীরা। তারা বলছেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েজন কর্মচারী এসে তালা দিয়ে চলে গেছে। আর বলে গেলে ভেতর থেকে কোন গাড়ি যেনো না বের হয়।
এ বিষয়ে কথা হয় কর্মচারী সবুজের সঙ্গে তিনি সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েজন কর্মচারী এসে তালা দিয়ে চলে গেছে। তারপর থেকে আর গাড়ি বের হয়নি। তবে সকালের কাজের জন্য যে গাড়ি বের হওয়ার কথা সেগুলো বের হয়ে গেছে। এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ১১০জন রযেছে। এর আগে রাসিকের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ তাদের কাজ বন্ধ করে দাবি আদায়ের জন্য নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় তারা নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাসিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে ভবন ঘেরাও করে রেখেছে। এতে করে কোনো কর্মচারী সকাল থেকে ভিতরে ঢুকতে পারেননি। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাসিক ভবনের সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক ইউনিয়নের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি, স্থায়ী কর্মচারীদের জ্যোষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান, স্থায়ী কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণের ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা, মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পোষ্যদের চাকুরি প্রদান, মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অবসরকালীন ভাতা সম্পন্নরুপে প্রদান, স্থায়ী কর্মচারীদের বদলি, সকোজ ও সাসপেন্ড বন্ধ এবং বরখাস্তকৃতদের চাকুরিতে পুনর্বহাল, সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন পূর্বক নিয়োগের ব্যবস্থা, মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়ী, কল্যাণ তহবিল বাস্তবায়নে চুড়ান্ত অনুমোদন এবং স্থায়ী কর্মচারীদের পোষাক, জুতা ও ছাতা সকলবকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি দুলাল শেখ বলেন, চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারীদের পাওনা ৪০ লাখ টাকা পরিষোধ করতে করেনি। এমতাবস্থায় আমাদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। আমাদের দাবির বিষয়ে ঈদের পর বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের কথা ছিল। কিন্তু আজ রাসিক কাউন্সিলদের সাথে শ্রমিক ইউনিয়নের বৈঠক বসে সেখানে কোন ফলাফল হয়নি।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজিবর আহমেদ মামুন বলেন, রাসিক প্রশাসন আমাদের সাথে প্রতারণা করছে। আমাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরায় তারা আমাদের আশ্বাসের পর আশ্বাস দিচ্ছে। যা এখন আমাদের প্রহসন মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ১ নম্বর ইস্যুতে তাদের বেশি অনাগ্রহ দেখাচ্ছে যা শ্রমিকদের জন্য খুবই জরুরি। এমন ভাবে চলতে দেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন রাসিকের দৈনিক মজুরীভিত্তিক কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে নগরভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত করে। এসময় রাসিককের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা সেই মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
স/আ