নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির মৃত্যুর পর থেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমজুড়ে প্রতিবাদ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিশেষ করে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের ফেসবুকে করা মন্তব্য সিল্কসিটি নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ আলী জয় লিখেছেন,
- ‘শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতই স্নেহ করতেন তিনি। শ্রেনী কক্ষে রিপোর্টিং শেখার হাতে খড়ি তার কাছেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আক্তার জাহান জলি আপা।এক জীবনে হয়তো তার দু:খের পাল্লাই ভারী ছিল। তারপরও তার হাসি মুখ কখনও মলিন হতে দেখিনি। শুক্রবার নিজ বাসায় তার মৃত দেহ পাওয়া গেছে। এই মৃত্যু স্বাভাবিক না। এই মৃত্যু স্বাভাবিক হতে পারে না।’
একই বিভাগে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘লাশকাটা ঘরে ফেলে এসেছি অাপনার দেহ। কিন্তু ফেলতে পারি নি অাপনার স্মৃতি। ম্যাম, অাপনি প্রচন্ড স্বার্থপর। হিম ঠান্ডায় কেমন চুপটি করে ঘুমাচ্ছেন। অামরা ঘুমাতে পারছি না। অাপনার স্মৃতিগুলো কষ্ট দিচ্ছে। ম্যাম সবাইতো অাপনাকে জানে না। ওরা কত কটূকথা বলবে। অাপনার তো এটা প্রাপ্য ছিল না। অাপনার মতো মানুষদের এভাবে যেতে হয় না। অাপনি বোঝেন না ? মায়ের অকাল মৃত্যুতে সন্তানের অবস্থা কেমন হয়। তখন অামাদের কথা মনে হয়নি ? একটুও মিস করেন নি ? না জানি কত কষ্ট পেয়ে অামাদের কথা ভুলে চলে যেতে বাধ্য হলেন। ভাবতে পারছি না। ঘোর অমানিষার মাঝে অাপনার মতো মানুষরাই দিশার অালো। এত সন্তানকে নির্ভরতা দিয়েছেন অাপনি। অার অাজ নিজের নির্ভরতাই হারিয়ে ফেললেন!! মায়ের মতো পরম মমতাময়ী শিক্ষককে হারানোর বেদনায় অাপনার শত সন্তান অাজ বেদনার্ত। নারী বলেই কি এভাবে হার মানলেন। মরে গিয়ে বেঁচে গেলেন, জীবনের গ্লানিতে রেখে গেলেন অামাদের। অাপনি নয় হেরে গেলাম অামরা?
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাবি সাংবাদিকতা বিভাগের আমাদের শিক্ষক জলি ম্যাডার আর নেই! শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাসের বাসা থেকে দরজা ভেঙ্গে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এটা কি আত্মহত্যা, হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু? অকালে এভাবে ঝরে যাবার কথা ছিলো না তার। তার এই ঝরে যাওয়ার কারণ কী? সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানতে চাইতেই পারি…
- আলী রমজান নামের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আরে উনি তো বলেছেন কেউ দায়ী না। আমাদের তো নিশ্চিন্ত থাকার কথা! কেন এত ভাবতে যাচ্ছি ঠিক হয়েছে কি হয়নি। যারা ভাল থাকার তারা ভাল থাকুক। সবাই ভালবাসত বলেই সবচেয়ে নির্মম সংবাদটা আমাদের লিখতে হল। জীবনে যেন আর এমন সংবাদ লিখতে না হয়।‘
অপর শিক্ষার্থী মোস্তাফিজ গনি লিখেছেন, ‘সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিয়েছিলাম, আকতার জাহান ম্যামের নাম। যতটুকু দেখেছি, কখনো কারও সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে শুনি নি। সাধ্যমত চেষ্টা করতেন, সহযোগিতার। কষ্ট হবে, তাঁর নামটা মুঝে ফেলতে। বিয়ের খবর শুনে বলেছিলেন, ‘মোস্তাফিজ বউ নিয়ে রাজশাহী বেড়াতে এসো।’
এমন একটা মানুষের এভাবে চলে যাওয়াটা বিশ্বাস করতে পারছি না। পরকাল থাকলে, সেখানে যেন খুব ভাল থাকবেন- প্রার্থণা করি।’
- প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৯৭ সালে শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন আকতার জাহান। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেই তানভীর আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। যিনি বর্তমানে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। কিন্তু বছর তিনেক আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
এরপর শিক্ষক তানভীরের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে ২০১২ সালে জুবেরী ভবনে ওঠেন আকতার জাহান। চলতি বছরের শুরুতে ছেলে ঢাকায় তার নানার বাড়িতে চলে গেলে জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে একাই থাকছিলেন আকতার জাহান জলি।
স/আর