নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী নগরীতে বাস চাপায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা বেপরোয়া গতির কেয়া পরিবহন নামের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ায় তারা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
- নিহতরা হলেন, ভ্যানচালক বশির উদ্দিন (৪০) ও তার স্ত্রী রেশমা বেগম (৩৮)। তারা বহরমপুর রেল ক্রসিংয়ের পাশে রেলওয়ের জমিতে বেড়ার বাড়ি করে বাসবাস করছিলেন। তবে অল্পের জন্য প্রাণের বেঁচে গেছেন তাদের দুই শিশু সন্তান রাহাত (৫) ও আলীফ (৭)। পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে থাকলেও তারা ঘটনার পরপরই ঘরের মধ্যে থেকে অক্ষত অবস্থায় অলৌকিকভাবে বের হয়ে আসেন।
এ ঘটনায় পাশের ঘরের ঘুমন্ত আরো ৫জনসহ অন্তত ১৫ বসাযাত্রী আহত হন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদের অধিকাংশকেই রাজশাহী মেডিকেল কলে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সিল্কসিটি নিউজকে জানান, রাত ১২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে ছেড়ে আসে কেয়া পরিবহন নামের একটি বাস। রাত ১০টার দিকে নাচোল থেকে বাসটি ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি দুই ঘন্টা দেরিতে ছাড়ায় শুরু থেকেই বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন চালক।
- এরই মধ্যে বাসটি রাজশাহী নগরীতে ঢুকে পড়লেও গতি না কমিয়ে একই কায়দায় চালাতে থাকেন চালক। একপর্যায়ে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই চালক বহরমপুর রেল ক্রসিং এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডান পাশে নেমে পড়ে। বাসটির গতি এতো বেশি ছিল যে রাস্তার পাশের উঁচু ফুটপাত পার হয়ে সিগন্যাল লাইট ভেঙে গিয়ে বাম পাশের বেড়ার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
এতে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় বশির উদ্দিন ও তার স্ত্রী রেশমা (৩৮) নিহত হন। তবে অল্পের জন্য প্রাণে যান তাদের দুই শিশু পুত্র রাহাত ও আলিফ।
- এছাড়াও পাশের রেলওয়ের গেটম্যানের ঘরে শুয়ে থাকা গ্যাটস্যান দিপু (৪০) ও তার স্ত্রী চাম্পা খাতুন (৩৫), ক্লাব ঘরে শুয়ে থাকা মানিক (১৬) ও জাকির (১৯), বাসযাত্রী মামুন (১৯), ফিরোজ (৪১), শরীফ (২৪), এমদাদুল (৩৪) ও উত্তমসহ (৫২) অন্তত ১৫ জন আহত হন।
তাদের সবাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে আসেন। তবে বাসের সহকারী চালকসহ দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
- রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপত্র ও রাজপাড়া জোনের সিনিয়র সহকারি কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম জানান, কেয়া পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৭২৮৪) নামে একটি বাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পথে রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর এলাকায় চালক বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে বাসটি রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এতে দুজন নিহতসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।
পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখান থেকে নিহত বশির ও রেশমার লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
- এদিকে ওই ঘটনার পরে বুধবার সকাল সাতটার দিকে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে রাজশাহী-চাঁপাই মহাসড়ক কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে।
অন্যদিকে নিহত রেশমার বোন শিল্পী বেগম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘ওই ঘটনাই বশির-রেশমা নিহত হওয়ার পাশাপাশি তাদের গোটা সংসারটিই তছনছ হয়ে গেছে। সংসারের একটা জিনিসও ভাল নাই, যা পরবর্তিতে তার তিন সন্তান কাজে লাগাতে পারবে। এর মধ্য দুজনই শিশু সন্তান। এরই এখন কোথায় যাবে। কি খেয়ে বেঁচে থাকবে তারা। সর্বনাশা বাস ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে সব শেষ করে দিল তাদের।’
স/আর