সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ৩টায় রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত ২৬ এপ্রিল বেলা ৩টায় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর সোমবার আবার তা বেড়ে দাঁড়াল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এছাড়া ২০০৫ সালের এপ্রিলেও এই একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে। ওই দিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে তাপদাহ চললেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তাপমাত্রার এই রেকর্ড আর ভাঙেনি।
এদিকে টানা তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। খরতাপে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। টানা তাপদাহ থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। কাঠফাটা রোদে পুড়ছে পথঘাট। দুপুর হলেই সূর্যের তাপে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। পুকুর, নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে।
নেমে যাচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানির স্তর। পদ্মাপাড়ের এই শহরে এখন গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। তাই বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা চলছেই। বৃষ্টির জন্য হাহাকার বাড়ছেই। দুঃসহ এই গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিদিনই সালাতুল ইসতিসকা আদায় করা হচ্ছে। নামাজ শেষে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনাও করা হচ্ছে।
তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে স্বস্তির বৃষ্টি চেয়ে রাজশাহীতে সোমবারও (২৯ এপ্রিল) ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। সকালে মহানগরের শিরোইল কলোনি স্কুল মাঠ এবং ফুদকিপাড়া মন্নুজান স্কুল মাঠে এই বিশেষ নামাজ আদায় করা হয়েছে।
মহানগরের শিরোইল কলোনি স্কুল মাঠ ও মন্নুজান স্কুল মাঠের এই নামাজে ইমামতি করেন রাজশাহী উলামা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও সাহেববাজার বড় জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মাওলানা মো. আব্দুল গনি। বিশেষ এই নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে সকল পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে চোখের পানি ফেলে বৃষ্টির জন্য দোয়া চাওয়া হয়।
তবে বৃষ্টির কোনো সুখবর দিতে পারছে না রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মো. গাওসুজ্জামান বলেন, ভারী বর্ষণ ছাড়া এই তীব্র তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই আপাতত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেন রাজশাহীর এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, সোমবার বেলা ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।
তীব্র গরমে অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিরূপ প্রকৃতির কাছে যেন হার মানছে প্রাণ-প্রকৃতি। টানা তাপদাহে যেন জীবনটাই থমকে দাঁড়িয়েছে। পুরো এপ্রিলজুড়েই স্মরণকালের তপ্ত মৌসুম পাড় করছেন রাজশাহীর মানুষ। মৃদু থেকে মাঝারি; মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে খরাপ্রবণ রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে।
বইছে লু-হওয়া। পদ্মাপাড়ের বালুরাশি ছুঁয়ে আসা গরম বাতাস যেন আগুনের আঁচের মতো অনুভূত হচ্ছে মানুষের রোদপোড়া শরীরে। সাতসকালেই বিরাজ করছে তপ্ত দুপুরের আবহাওয়া। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেন একই মাত্রায় তাপ নামছে রাজশাহীতে। অফিস-আদালত কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান; ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, ভয়াবহ এই গরমে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শিশু ও বৃদ্ধরা বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বাইরে বের হলে কিছুক্ষণ পরপর ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। কারণ পানির কারণেই এই গরমে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই বাড়ছে। এছাড়া হিট স্ট্রোকসহ অন্যান্য অসুখবিসুখ থেকে বাঁচতে ছায়ায় থাকা এবং পচা-বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে বলেও উল্লেখ করেন এই চিকিৎসক।