মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি হবে ১৪ হাজার ‘বীর নিবাস’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য আবারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এবার ১৪ হাজার পাকাবাড়ি নির্মাণ করে অসচ্ছলদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে। জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজে রাঙানো এসব বাড়ির নাম দেয়া হচ্ছে ‘বীর নিবাস’। বারান্দাসহ দুই বেডরুমের একতলা প্রতিটি বাড়িতে থাকবে আলাদা শৌচাগার ও টিউবওয়েল। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনের জন্য থাকবে পৃথক শেড। প্রতিটি বাড়ির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। ২ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগির তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সোমবার নিজ দফতরে  বলেন, ‘মুজিববর্ষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ১৪ হাজার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি করে বাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। মুজিববর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে সম্মানিত করা হবে। এ ছাড়া স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক উপহার থাকবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিতব্য প্রতিটি বাড়ি হবে ৯৮০ বর্গফুটের। চার শতাংশ জমিতে ৯০০ বর্গফুট আয়তনের এক-একটি ভবনের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে।’

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ  বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে তারা কিছু পর্যবেক্ষণসহ ফেরত পাঠায়। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আবার প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগির একনেকের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। একনেকের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্প পরিচালকসহ জনবল নিয়োগ করে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।’

সূত্র জানায়, এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের পর সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হবে। অসহায় ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতেই দ্বিতীয় পর্যায়ে এ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এর আগে প্রথম ফেজে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য ২ হাজার ৯৬১টি আবাসন নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। যার নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে।

সূত্র জানায়, এ বাড়ি বরাদ্দের জন্য অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ-প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী ও সন্তান আবেদন করতে পারবেন। বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনটি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শেষে সরাসরি তাদের বিপরীতে আবাসন বরাদ্দ দেবে। সুবিধাভোগী নির্বাচনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবের ‘বরাদ্দপ্রাপ্ত আবাসনের ব্যবহার’ শীর্ষক কলামে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘সুবিধাভোগীকে বরাদ্দপ্রাপ্ত বাড়িটি শুধু নিজের বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করবেন মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। কোনোভাবেই বিক্রি বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নির্মিত বাড়িটির মূল অবকাঠামোগত কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা যাবে না। বাড়িটি সংস্কার, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সুবিধাভোগী নিজে বহন করবেন।’

 

সূত্রঃ যুগান্তর