বৃহস্পতিবার , ২ জানুয়ারি ২০২০ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ভালোলাগা বিক্রি করে, কতটা ভালো আছে রাজশাহীর পথশিশুরা

Paris
জানুয়ারি ২, ২০২০ ৬:৫৩ অপরাহ্ণ

নূপুর মাহমুদ

কেউ বেলুন হাতে, আবার কেউ ফুল হাতে, দেখা মিলে নগরীর রাস্তায় বের হলে। ছুটে আসে একদল পথশিশু, তাদের ভাষ্য ‘আপু-ভাইয়া একটা বেলুন নেন না, সারাদিন কিছু খাইনি। ভাত খাবো, একটা নেন।’

এমনি ভাবে কিছু শিশু যারা সারাদিন রাজশাহীর রাস্তা-ঘাটে সাধারন মানুষের মাঝে ভালোলাগার এসব জিনিস নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কথা হয় তাদেরই একজন শিশু নগরীর শেখেরচক এলাকার মায়নুল (৭) এর সাথে। বাবা তার মাকে ছেড়ে কবে চলে গেছেন সেটা তার জানেই নেই। তার মা পরে অন্যত্র সংসার বেঁধেছে। বৃদ্ধ দাদির কাছেই রাতে থাকে সে।

সারাদিন ঘুরে বেড়ায় হাতে বেলুন নিয়ে। এমনো হয় কেউ ভালোবেসে কিছু খাবার দেয় তাই খেয়ে ওর দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু আগামীর দিনগুলো যে অনিশ্চয়তায় ভরা সেটা মায়নুলের বোঝার বয়স হয়নি। সুন্দর জীবনের স্বপ্নও তাকে দেখায়নি পরিবার-পরিজন। খোঁজ রাখেনি সরকারি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানও।

মায়নুলের সাথে ছিলো আরেক শিশু সাব্বির (৭)। ফুটফুটে এই শিশুটিও সারা দিন ঘুরে বেড়ায় হাতে বেলুন নিয়ে। শহরের লক্ষীপুর ভদ্রা মোড়, পদ্মাপাড় ও সাহেব বাজার এলাকা ঘুরে ঘুরে বেলুন বিক্রি করে। বলে ভাইয়া-আপু একটা বেলুন নেন কিছু খাইনি সারাদিন এই বলে কাকুতি মিনতি করেন। আর এভাবেই যা টাকা হয় এসব বিক্রি করে তা থেকে কিছু খেয়ে রাতে তার মায়ের কাছে ফেরেন। এভাবে চলে যাচ্ছে তার দিন।

আরেক শিশু রাব্বি হাছান আব্দুল্লাহ (৯)। যার পিতা অপরাধমূলক কাজের কারণে এখন জেলাখানায়। রাব্বির বয়স যখন তিন বছর তখন তার পিতা জেলে যায়।

রাব্বি বলেন, আমার মা-বাবা কেউ নেই। আমি রাস্তায় থাকি। নানা বাড়ি রাজশাহীতেই মামারা দেখেন না। মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে বেলুন বিক্রি করি। মাঝে মধ্যে ফুল ও বাদাম বিক্রি করি। আমি পড়ালেখা করতে চাই। আমারও মন চায় পড়ালেখা শিখে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে।

এদিকে শিশু নাজমুল (১২) জানায় তার জীবনের কথা। সে বলে, তার মা-বাবা’র বিচ্ছেদ হলে পরে দুজনই অন্য জায়গায় বিয়ে করে চলে গেছে। তাই তো বর্তমানে তার ঠিকানা হয়ে নগরীর রাস্তায়, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে। সেখানেই ঘুরে বেড়াই আর সেসব স্থানেই থাকে। নগরীর কোট, পদ্মাপার লক্ষিপুর বিভিন্ন স্থানে ফুল বিক্রি করে খাবার জোগাড় করে সেও।

নাজমুল বলেন, পড়াশুনা করার ইচ্ছা আছে। যদি তেমন সুযোগ পেতাম তাহলে লেখাপড়া করতাম।

আসলে কিন্তু এই সাব্বির মাইনুল বা রহিম আব্দুল্লাহ কারো খোঁজ রাখে না কেউই। বরং সমাজের এক শ্রেণির মানুষ এসব শিশুদের অপরাধে যুক্ত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে বলেও জানা গেছে।

টাকা রোজগার আর প্রতিদিনের ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টায় এভাবেই চলে যাচ্ছে তাদের জীবন। শহরের মধ্যে এমন কিছু পথশিশুর সাথে কথা বলে উঠে আসে এমনই সব তথ্য। আর কত জন পথশিশু এভাবে ঘুরে বেড়ায় রাজশাহীর অলিগলিতে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি।

তাই তো এভাবেই অবহেলা আর অনাদর মানুষের কাছে থেকে পেয়ে জীবন চলে যাচ্ছে তাদের। সমাজের সাথে সাথে আসলে তারা নিজেরাও জানে না, কথটা ভাল আছে তারা।

স/অ

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর