সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তরুণদের কর্মসংস্থানের মূলে রয়েছে বেসরকারি খাত। আমাদের বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুই শতাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মতবিনিময়ের অভাব, সরকারি অফিসের জটিল প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি দুর্নীতি, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যায় ফেলেছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ নিরসনে আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি। ইতোমধ্যে সত্যিকারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন হয়েছে। বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি অফিসে না-এসে প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা আমাদের অগ্রগতির বিষয়ে সবাইকে মাসিক ভিত্তিতে আপডেট করে যাচ্ছে।
আমরা প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করছি। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জনসহ অন্যান্য বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। এসব বাংলাদেশি কারাবাসের ঝুঁকি নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছি। বাংলাদেশিরা এরকম প্রতিবাদ আরও অনেক দেশেই করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কয়েকদিন আগে বাকুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের জন্য যেকোন সাহায্য লাগলে আমি যেন তাকে জানাই। প্রবাসীদের কল্যাণে আমাদের সরকার সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ১৮ হাজার বাংলাদেশি, যারা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলার পরও স্বৈরাচারী সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্য মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তিনি তাদের জন্য মালয়েশিয়ার দ্বার আবার উন্মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আমরা কাজও শুরু করেছি।
আপনারা জেনে থাকবেন মালয়েশিয়া আগামী বছর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে আসিয়ানের সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের আবেদন সক্রিয়ভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। একই ধরনের আশ্বাস আমরা পেয়েছি ইন্দোনেশিয়া থেকেও। ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে সেদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে যাবার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছে। সৌদি আরবসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথমবারের মতো ওআইসি সদর দপ্তরে আমরা স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিচ্ছি। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে আগে আমার টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। এবার COP29 সম্মেলনে গিয়ে তিনি ও তার স্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি তার বিশেষ সমর্থনের কথা তিনি বারবার প্রকাশ করেছেন। তুরস্কের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছে। তুরস্ক এদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য টার্কিশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (TICA) একটি অফিস ঢাকায় স্থাপনের জন্য ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে তুরস্কের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই উদ্দেশ্যে চলতি মাসেই একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দল তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে আসছেন।
সূত্র: যুগান্তর