সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে ঘুষবাণিজ্য এবং অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে বদলি, পদোন্নতি ও জনবল নিয়োগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে- আসাদুজ্জামান কামাল ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে ঘুষবাণিজ্য করতেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরই আসাদুজ্জামান কামাল ঘুষ হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এসব টাকা আদায় করা হতো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মন্ত্রীর দীর্ঘদিনের পিএস (একান্ত সচিব) হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্য ছিলেন যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন। টাকা আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন হারুন বিশ^াস। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কামাল-হারুন সিন্ডিকেট। হারুন অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই ছিল। ঝুঁকি এড়াতে এসব টাকা দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস হারুন বিশ^াস সিন্ডিকেট জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) পদায়নে ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ নিতেন। ২০২২ সালে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নিয়োগে ৫ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঘুষ হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। এই সিন্ডিকেটের ঘুষ গ্রহণের উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম। ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর মাসখানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ^াসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্যা নজরুল। পরবর্তী সময় গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। এ সময় আগের দেওয়া চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরবর্তী সময় বাকি টাকাও দেওয়া হয়। এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হয় আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ফার্মগেটের বাসায়।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলে নিয়োগের জন্য মন্ত্রীর দপ্তর থেকে তালিকা পাঠানো হতো। ২০২৩ সালে ফায়ার সার্ভিসে ৫৩৫ জনকে নিয়োগে মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের তালিকা পাঠানো হয়। এসব নিয়োগে জনপ্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেয় কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।
এ ছাড়া এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি সংস্থা থেকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিতে হতো আসাদুজ্জামানকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে রাজধানীর উত্তরার একটি উন্নয়ন সংস্থাকে এনওসি দিতে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন এবং তিন সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন ও মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিতেই নয়, আলোচিত মানি লন্ডারিং মামলার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দিতে হারুন সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে পলাতক রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি কোথায় আত্মগোপন করেছেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাকে ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
