সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে নাজেহাল হওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তারিক সালমানের পক্ষে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাজেহাল হওয়া ইউএনও’র পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা করে শিশুদের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে ইউএনও প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হুবহু ছবি আজ পর্যন্ত কেউ আঁকতে পারেনি। আমরাও যেগুলো ব্যবহার করি ওইসব ছবিতেও কিছু খুঁত থাকে। হুবহু হয় না, আমি তো জানি।’ ছবি বিতর্কের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হলে এসব মন্তব্য করেন তিনি। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ঘটনাটি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া শিশুটি যে ছবি একেঁছে, তা খারাপ আকেঁনি। শিশুদের কল্পনায় বঙ্গবন্ধু যেভাবে ফুটে উঠেছেন তা তারা প্রকাশ করেছে, আর ওই ছবি ব্যবহার করে ইউএনও’র কার্ড ছাপানোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়েছে এটিই বড় ব্যাপার। প্রশংসনীয় এই উদ্যোগকে বিতর্কিত করা হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ইউএনও’র নাজেহালের ঘটনাটি নিয়ে ভীষণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ছবি ব্যবহার করা নিয়ে যারা এটা করেছে, তারা নিশ্চয়ই দলের ও সরকারের জন্যে ভালো কিছু করেনি।’ তিনি বলেন, ‘যে বিচারক সরকারি একজন কর্মকর্তাকে জেলে পাঠিয়েছেন তিনি হয়তো নিজে অতিউৎসাহী হয়ে এটা করেছেন, অথবা কারও ফোন পেয়ে প্রভাবিত হয়েছেন। এখন খুঁজে বের করতে হবে সেই ফোন কার ছিল। একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বিভাগীয় অনুমতি লাগে। তিনি কি তা নিয়েছেন-আমার প্রশ্ন।’
সূত্র জানায়, ইউএনও’র এ ঘটনায় প্রশাসনের ভেতরে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আর এ প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী নিজে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। গণভবনের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। ওই সূত্র আরও জানায়, ইউএনও নাজেহালের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী অনেক পরে অবগত হয়েছেন। এটা জেনে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই হস্তক্ষেপ করেন, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিকৃত ছবি ব্যবহারের অভিযোগে বরিশালে দায়ের করা একটি মামলায় আগৈলঝাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমান নাজেহাল হন।
আগৈলঝাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮-তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিশুর আঁকা দু’টি ছবি ব্যবহার করে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৭-এর আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।
আমন্ত্রণপত্রের প্রচ্ছদে (ফ্রন্ট কাভার) ওই প্রতিযোগিতায় ‘গ’ গ্রুপে প্রথম হওয়া আগৈলঝাড়া এসএম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময়ের আঁকা মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্রের একটি ছবি এবং শেষ প্রচ্ছদে (ব্যাক কাভার) ‘খ’ গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আগৈলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্রিজা করের আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছিল।
শিশুদের সৃজনশীল ও সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি ব্যবহার করে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্রটি ডিজাইন করা হয়।
আমন্ত্রণপত্রটি ছাপা হওয়ার পর শেষ প্রচ্ছদে জাতির পিতার প্রতিকৃতিটি বেমানান মনে হওয়ায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৭-এর আমন্ত্রণপত্রটি সংশোধন করে পুনরায় ছাপা হয়। সংশোধিত আমন্ত্রণপত্রে জাতির পিতার প্রতিকৃতিটি প্রচ্ছদে ও মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্রের ছবিটি শেষ প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন