বগুড়ায় অতিবর্ষণে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোয়ালভাগ গ্রামের কৃষক মাহাম আলী ধার-দেনা করে এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের সবজি টমেটো চাষ করেছেন। প্রায় প্রতিটি গাছই সতেজ হয়ে উঠেছে। আর কয়েকদিন পরই গাছে টমেটো ধরতো। কিন্তু দিন কয়েকের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। টমেটো গাছগুলো এখন মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কী করে ঋণ শোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাহাম আলী।

কৃষক মাহাম আলী একা নন, কয়েক দিনের অতিবর্ষণে ধুনট, সারিয়াকান্দি ও শেরপুর উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হতে চলেছে। বৃষ্টিতে এই উপজেলার বিভিন্ন জাতের সবজি ও রোপা আমন ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষক। তিন উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করছেন লাল শাক, ডাটা শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, মূলা, বেগুন, শষা, পেঁপে ও টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির পানিতে জমি ভেজা থাকার কারণে নেতিয়ে পড়েছে অধিকাংশ সবজি গাছ। এছাড়া নীচু এলাকার রোপা আমন ধান ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমেছে। ক্ষেতের ফসলের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত কৃষকের, লোকসান হবে হাজার হাজার টাকা।

উপজেলার পাঁচথুপি গ্রামের কৃষক তজুমুদ্দিন বলেন, দুই বিঘা জমিতে পেঁপে চারা রোপন করেছি। গাছে পেপে ধরতে শুরু করেছে। প্রতি বছর এই জমির পেঁপে বিক্রি করে লাভ হয় ভালো। কিন্ত এবার বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় জমিতে পানি জমে গেছে। পানি বেশি হওয়ার কারণে গাছ ঢলে পড়ে আবার বৃষ্টির পর রোদ হলে নেতিয়ে পড়ে মারা যায়। দুয়েক দিনের মধ্যে বেশিরভাগ পেঁপে গাছ মারা যাবে। তাই এবার লোকসান গুনতে হবে।

গোসাইবাড়ি এলাকার চাষি হাসেম আলী বলেন, নিচু জমি তো বটেই। এখন মাঝারি জমির সবজি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। যে সমস্ত গাছ টিকে আছে, তাতেও ফলন কম হবে। একটানা বৃষ্টিপাতের জন্য ক্ষেত থেকে পানি বাইরে বার করার কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে জটিলতা বেড়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এলাকায় বৃষ্টির কারণে সবজির নার্সারিতে পানি বেধে গেছে। নার্সারিতে ঢেকে দেয়া পলিথিন এক পাশে পড়ে আছে। চারার গোড়ায় পানি জমে চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি বছর চাষিরা শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করে থাকেন। অনেকে নিজের খেতে চারা রোপন করা ছাড়াও সবজির চারার ব্যবসা করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা এখানে সবজি চারা কিনতে আসেন। যে কারণে প্রতিটি কৃষক এখানে চারা উৎপাদন করেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে বিরামহীন বৃষ্টিতে মাঠের অধিকাংশ সবজি ক্ষেতের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, বন্যার ক্ষতি পুশিয়ে নিতে কৃষক নানা জাতের সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্ত অতিবর্ষণে সবজি ও নীচু এলাকার রোপা আমন ধান ডুবে যাচ্ছে। দুয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি থেমে না গেলে ফসলের ক্ষতি হবে। তবে কৃষকদের জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।