বুধবার , ২৮ আগস্ট ২০২৪ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বগুড়ায় কৃষকদের বাড়তি আয়ে বাড়ছে বস্তায় আদা চাষ

Paris
আগস্ট ২৮, ২০২৪ ৬:৫৩ অপরাহ্ণ

দীপক কুমার সরকার, বগুড়া:
বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের মাঝে বাড়তি আয়ের জোগানে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ। স্বল্প খরচে বেশি আয়ের আশায় পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, ঘরের আশে পরিত্যক্ত স্থান, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরে কিংবা টবে আদা চাষ করা হচ্ছে। এতে জেলার খাদ্য তালিকায় মোট ৬ হাজার মেট্রিক টন আদার চাহিদার বিপরীতে পরিমান কমিয়ে আনতে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস বলছে, বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ করে প্রতি বস্তা থেকে প্রায় ১থেকে ২ কেজি আদা পাওয়া যাবে। জেলার সব উপজেলায় কম-বেশী বস্তায় আদা চাষের আগ্রহ বাড়ছে। জেলায় প্রায় ৩ লক্ষাধিক বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে বাড়তি লাভের আশায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে। আদা চাষ বেশী হলে বৈদেশিকভাবে আমদানীকৃত আদা চাহিদা অনেকটাই কমে আসবে বলে দাবী সচেতনমহলের।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে সরেজমিনে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন এই এলাকার কৃষকরা। সফলতা পেলে ভবিষ্যতে এভাবে আদার চাষের পরিধি আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিস্ট কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে, শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর, কৃষ্ণপুর, বোয়ালমারী, রহবল গ্রামের কৃষকরা বাড়ির আশপাশে বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এদের মধ্যে তালিবপুর গ্রামের কৃষক রিজ্জাকুল ইসলাম প্রায় ৩ হাজার ৫ শ’ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বস্তায় আদা লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যে চারা বের হয়ে দ্রুত বেড়ে উঠছে আদা গাছগুলো। বাড়ির পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। সাড়িবদ্ধভাবে বস্তায় গাছ দেখতে এসে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন। আদা উত্তোলনের আগ পর্যন্ত প্রতি বস্তায় খরচ হয় মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর প্রতিটি বস্তায় ২ থেকে ৫ কেজি আদা উৎপাদন হবে। এতে প্রতি বস্তায় খরচ বাদ দিয়েও একজন কৃষকের আয় হবে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। তার দেখাদেখী ওই গ্রামের তাজুল ইসলামও বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এসব আদা লাগিয়েছে এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। একই ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের মুসা প্রামানিক জানান, আমি এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমার আদার গাছে কোনো রোগ বালাই দেখা দেয়নি। আশা করছি ভালো ফলন পাবো।

বোয়ালমারী গ্রামের মাসুদ মিয়া জানান, আমি আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করিনি। এবার ৫০০ বস্তায় চাষ করছি। বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় চাষ করলেও তেমন কোন রোগ বালাই দেখা দেয়নি। আরেক চাষী দুপচাচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌর এলাকার বাজার মহল্লার বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দীন খন্দকারের সঙ্গে কথা হলে জানান, তিনি ধানচালের ব্যবসা করেন। এর পাশাপাশি পরিত্যাক্ত একটি চাতাল ভাড়া নিয়ে ৪ হাজার বস্তায় এই প্রথম আদা চাষ শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শে নিয়মিত আদা গাছ পরিচর্যা করে আসছেন। তার আশা এতে তিনি লাভবান হবেন। অপর আদা চাষী তালোড়া মন্ডল পাড়ার সেলিম খান বলেন, অনলাইনে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি তার পুকুর পাড়ের চারপাশে ২ হাজার ৫’শ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস হতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে আদার ক্ষেতের যে অবস্থা তাতে আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন বলে জানান।

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মোজাহিদ সরকার জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমি ও শ্রমের প্রয়োজন হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়। মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাইসহ রাসায়নিক সার মিশিয়ে কৃষকরা পতিত জমি কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদার চাষ করেছেন। সার গোবর ছাড়া একটু খেয়াল ও মাঝে মাঝে পানি দিলেই আদাগাছ টিকে যাবে। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্ধুদ্ধ করছি এবং সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল গ্রামের আদাচাষি আবদুল করিম বলেন, প্রথমে ইউটিউব দেখে আদাচাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে আদাচাষ শুরু করি। আমি পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র আট শতক জমিতে দুই হাজার বস্তায় টবের মতো করে আদা রোপণ করি। এতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। তবে বাজারে ভালো দাম পেলে প্রায় ছয় লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

সোনাতলা পৌর এলাকার কানুপুর গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল হক বাবু জানান, পাশের বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার তার বাড়িতে বস্তায় করে আদা চাষ করেছিল। এমন দেখে তার পতিত জমিতে সাড়ে ৭০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। উপজেলার ড. এনামুল হক কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক জানান, তার কলেজ প্রাঙ্গণে ৫ শতাধিক বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এটা দেখে পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান তারাও উদ্বুদ্ধ হয়ে তার প্রতিষ্ঠানে আদা চাষ শুরু করেছেন’।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন জানান, বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তার অফিস সংলগ্ন পতিত জায়গায় প্রায় ১ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই উপজেলায় ১৮ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে।

এছাড়াও বগুড়া সদর উপজেলা, শাহজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, শেরপুর, ধুনট, দুপচাচিয়া, আদমদীঘি, কাহালু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষ করা হচ্ছে বস্তায়। উপজেলাগুলোতে এই ফসল চাষের পরিধি বাড়াতে ইতোমধ্যেই প্রায় তিন লাখ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। উপজেলাগুলোর অনাবাদি, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধার, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পতিত জায়গা ও পুকুরপাড়ে বস্তায় আদাচাষে কৃষক নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছেন। অল্প জায়গায় কম খরচে অধিক লাভের আশায় এবং বছরজুড়ে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক।

এ বিষয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. মকছেদুল আলম বলেন, আদা পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ কমায়, বদহজম, পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ওজন ও রক্তচাপ কমায়, হজম ও সর্দি-কাশি নিরাময়ে সহায়তা করে, বমি বমি ভাব দূর করে, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বগুড়ার উপ-পরিচালক(শষ্য) মো. মাতলুবর রহমান জানান, জেলার সবগুলো উপজেলায় বর্তমানে কম-বেশী বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। কম খরচে আদা চায়ের আগ্রহ ও পরিবারের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বিপনন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে আসছে। জেলার মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন আদা লাগে। যদি ৩ লক্ষাধিক বস্তায় আদা চাষ হয় সেক্ষেত্রে ৩’শ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন হচ্ছে। যা শতকরায় ১৮ভাগ চাহিদা পূরণ করছে। তবে অল্প খরচে এর উৎপাদন হওয়ায় খাদ্যর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে এবং বিপণন করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ - কৃষি