সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
সম্প্রতি পুলিশের লাঠিচার্জের পর বিনা বেতনে চাকরি করা অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের খালি হাতে বিদায় হতে হয়েছে রাজপথের আন্দোলন থেকে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শিক্ষা উপদেষ্টার পা ধরে এমপিওভুক্ত দুই শিক্ষক বদলির জন্য ‘কান্নাকাটি’ করার দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ‘এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিবুল ইসলাম এবং সংগঠনের রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ক মো. শরিফুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির জন্য স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন। শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি সরকার যাতে গুরুত্ব দেয় শিক্ষা উপদেষ্টা যেনও এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ভূমিকা নেন, সে কারণে নিরুপায় দুই শিক্ষক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পা ধরে অনুনয় বিনয় করেন।
‘এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে এই ছবি পোস্ট করে বলা হয়, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিবুল ইসলাম ও রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ক মো. শরিফুল ইসলাম শূন্যপদে বদলির দ্রুত প্রজ্ঞাপন পাওয়ার লক্ষ্যে বাবার সমতুল্য শিক্ষা উপদেষ্টার পা ধরলেন।
এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দুজন শিক্ষকের সমালোচনা করেছেন অনেকে। অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক এই দুই শিক্ষককে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
চন্দন কুমার জীবন নামের একজন শিক্ষক ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘সত্যিই হতাশ শিক্ষকসমাজ। আমার ভাই, আমার শিক্ষক, আমার দেশের জাতি গড়ার কারিগর। আজ শূন্যপদে বদলির জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার পা ধরে কাঁদলেন। এটা অসম্মানের নয় বরং গর্বের। কারণ, আপনি একজন পিতৃসমতুল্য গুরুজনেরই পা ধরেছেন। স্যালুট স্যার আপনাকে। হাজার হাজার শিক্ষকের জন্য আপনি পা ধরলেন। বদলি জীবনে না হতে পারলেও আপনাকে হাজার স্যালুট জানাই। আপনি শিক্ষকনেতা নন, আপনি প্রত্যেক শিক্ষকের ভাই। স্যালুট ভাই আপনাকে।’
বঞ্চিত শিক্ষকদের পক্ষে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এটি হতাশা এবং জাতির জন্য লজ্জাজনক। তবে কেন এটি বাস্তবায়ন হয় না, আমার বোধগম্য নয়। শিক্ষা উপদেষ্টার পা ধরে কান্নাকাটি করা দুই শিক্ষক ছোট হয়ে যাননি, শিক্ষকদের ছোট করা যায় না। শিক্ষকরা ছোট হতে পারেন না। কোন পরিস্থিতিতে গেলে শিক্ষকরা পা ধরে, তা বুঝতে হবে। বরং এই দুই শিক্ষক শিক্ষকদের জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ভূমিকা রেখেছেন। হাজার হাজার শিক্ষকের দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করেছেন। শিক্ষা উপদেষ্টার পা ধরে কান্নাকাটি করার এই পরিস্থিতি শিক্ষকদের তৈরি করা নয়, রাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের তৈরি করা। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার চেয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এ ছাড়া উপায় কী?
শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কিছু কথা বলতেই হচ্ছে, আমরা যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত, আমাদের অনেকেই দূরদূরান্তে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চাকরিতে যোগদান করেছি। কিন্তু আমরা বদলি নীতিমালার ৭ নম্বর ধারার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে ও যেকোনও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়ার একটা সুযোগ ছিল। পরবর্তীতে সেই ধারা স্থগিত করে আবেদনের সুযোগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে আমরা আমাদের বাড়ির কাছে থেকে চাকরি করার সুযোগটা হারিয়ে ফেললাম। যদিও এখন পর্যন্ত হাজার হাজার পদ ফাঁকা আছে বাড়ির পাশে নিজ উপজেলায়। ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালায় ১২.২ ধারায় শূন্যপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের কথা উল্লেখ থাকলেও আমাদের শূন্যপদে বদলির পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে পারস্পরিক বদলির পরিপত্র করা হয়েছে যেটা দিয়ে এক শতাংশ শিক্ষকও বদলি হতে পারবেন না।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন