সোমবার , ৮ জুলাই ২০১৯ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পুরুষের মন পেতে আঙুল ভেঙে পা ছোট রাখা হতো নারীদের!

Paris
জুলাই ৮, ২০১৯ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ  ডেস্ক:

নারীর সৌন্দর্য তার পায়ে এমনটা মনে করা হতো চীনে। যে নারীর পা যত ছোট সে ততো সুন্দরী। চীনে এমন রীতিই চলে আসছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

ছোট পায়ের নারীদের প্রতি আকর্ষিত হতো পুরুষেরা। যে কারণে এমন নারীদের বিয়ে করতে প্রতিযোগিতায় নামত ধনীরা।

ঠিক সে কারণেই ধনী ঘরে বিয়ে দিতে নির্মমভাবে মেয়েদের পা ছোট করে রাখার কুপ্রথা চালু ছিল প্রাচীন চীনে।

প্রথাটি এতোই ভয়ঙ্কর ছিল যে কৃত্রিমভাবে পা ছোট রাখতে আঙুল ভেঙে দেয়া হতো তিন-চার বছর বয়সী কন্যাশিশুদের।

চৈনিক ইতিহাস বলছে, পা নরম রাখতে প্রথমে উষ্ণ ভেষজ ও পশুর রক্তে পা ভিজিয়ে রাখা হত কন্যাশিশুদের। কেটে ফেলা হত নখ। তার পর ঘটত সেই পৈশাচিক কাণ্ডটি। কোমলমতি কন্যাশিশুদের পায়ের আঙুলগুলো নীচের দিকে বাঁকিয়ে ভেঙে ফেলা হত। এরপর পরিয়ে দেয়া হতো লোহার জুতো, যেন পা আর না বাড়ে।

হাড় ভাঙার যন্ত্রণায় এসব শিশুরা কাতরাতে থাকলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিল না স্বজনদের। শক্ত ব্যান্ডেজে আঙুল ভাঙা পা মুড়ে ফেলা হত। ব্যান্ডেজ এমনভাবে বাঁধা হত, যাতে ভাঙা হাড়গুলো কখনোই জোড়া না লাগে।

এভাবেই বছরের পর বছর এই ব্যান্ডেজ বাঁধা বিকৃত পা নিয়েই বড় হতে থাকত শিশুরা। এরইমধ্যে অনেক তাদের অনেকের পায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ত, কারও কারও রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে পায়ে পচন ধরত।

তবু রেহাই পেত না তারা। উল্টো খুশিই হতেন পরিবারের লোকজন। কারণ পায়ে পচন ধরলে আঙুল খসে পড়ে যাবে, তাতে পা আরও ছোট লাগবে।

ইতিহাস বলছে, এসব সংক্রমণ ও পচনের কারণে অনেক তরুণীরা মৃত্যুবরণ করত। তবুও থেমে ছিল না এই ভয়ঙ্কর প্রথাটি।

দ্রুত পচনের জন্য অনেকে নাকি ব্যান্ডেজ বাঁধার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কাপড়ের মধ্যে কাচের টুকরো বা আলপিন লাগিয়ে দিত যাতে যত দ্রুত সম্ভব পায়ে পচন ধরে।

আঙুল ভেঙে মেয়েদের পা এভাবে ছোট রাখার একটাই উদ্দেশ্য – পুরুষের মন পাওয়া।

মেয়েদের পা ছোট রাখতে বাধ্য করার এই কুপ্রথাটি কবে ও কীভাবে চালু হয়েছিল সে নিয়ে রয়েছে একটি মিথ।

চীনের ইতিহাস বলছে, ১২৭৯ সালে সং বংশের রাজত্বকালে রাজ দরবারের নর্তকীদের মধ্যে প্রথম এই প্রথা চালু হয়। অনেক ঐতিহাসিকের মতে ৯৭৫ সালে ট্যাং বংশের রাজত্বকালের লিখিত পুঁথিতেও পা ছোট রাখার রীতির উল্লেখ রয়েছে।

কথিত আছে, এক নর্তকীর সুন্দর, ছোট পা দেখে মোহিত হয়ে যান সে সময়ে এক রাজা। তার পর থেকেই ছোট পায়ের হিড়িক পড়ে যায়। অভিজাতদের মধ্যেও এই বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর ধনী পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে সাধারণ মানুষেরাও পা ছোট রাখার প্রথায় জড়িয়ে পড়ে।

১৯ শতকের গোড়ার দিকে চীনে মোট নারী জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরই পা ছোট ছিল। শুধুমাত্র অভিজাতদের মধ্যেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ১০০ শতাংশ। তবে ১৬৪৪ সাল থেকে মাঞ্চু চিং বংশ ক্ষমতায় এলে পা ছোট করে রাখার কুপ্রথা নিষিদ্ধ হয়। তার বদলে নৌকোর মতো দেখতে উঁচু হিলের জুতো চালু হয়।

তবুও এই প্রথা থেকে ফেরানো যাচ্ছিল না চীনা অধিবাসীদের।

১৯০০ সালের পর থেকে এই নির্মম প্রথার বিরোধিতা করতে শুরু করেন দেশটির মুসলমানরা। রাজতন্ত্রের অবসানের পর চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯১২ সালে আইন করে পা ছোট করার কুপ্রথা নিষিদ্ধ হয়।

সর্বশেষ - বিচিত্র