শুক্রবার , ৯ আগস্ট ২০২৪ | ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পিস্তল কেড়ে সেনাবাহিনীর কাছে জমা, জমি দখল করতেন ডিবির এসআই আশরাফুল

Paris
আগস্ট ৯, ২০২৪ ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে এলাকাবাসীর মারধরের শিকার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম জড়িয়ে পড়েছিলেন জমির কারবারে। তিনি সরকারি পিস্তল দেখিয়ে জমি দখলে নিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই জমি বিক্রির নামে তিনি আবার টাকা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু জমিও দিতেন না, টাকাও ফেরত দিতেন না। টাকা চাইলে ভয় দেখাতেন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এই এসআই বুধবার নগরীর টুলটুলিপাড়া মোড়ে মারধরের শিকার হন। তিনি পিস্তল বের করে গুলি করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তার কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেন। পরে তা সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার পর সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এসআই।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার নাম মিজানুর রহমান। হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মিজানুরকেই বুধবার গুলি করতে পিস্তল বের করেছিলেন এসআই আশরাফুল ইসলাম। মিজানুরের বাড়ি পাশর্^বর্তী হড়গ্রাম পূর্বপাড়া মহল্লায়। জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে মিজানুর তার নানা অপকর্ম তুলে ধরেছেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, তিনি আশীষ চন্দ্র ঘোষ নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির সাড়ে ৭ কাঠা জমি কিনতে বায়না করেছেন। কিন্তু প্রায় ৮ মাস আগে এসআই আশরাফুল আশীষ চন্দ্র ঘোষের এই জমিটি অস্ত্র দেখিয়ে দখল করে নিয়েছেন। এ নিয়ে এসআই আশরাফুলের সঙ্গে তার বিরোধ। বুধবার এসআই আশরাফুল ইসলাম তার সোর্স মোখলেসুর রহমানের মাধ্যমে তাকে টুলটুলিপাড়া মোড়ে ডাকেন। তিনি সেখানে গেলে আশরাফুল তাকে বলেন, মিজানুর যেন এই জমির দাবি না করেন। কিন্তু বায়না করা জমির দাবি কেন তিনি তুলবেন না, এমন প্রশ্ন করলে এসআই আশরাফুল তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় এলাকার নাসির নামের এক ব্যক্তি তাকে রক্ষা করতে গেলে আশরাফুল তাকেও মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে গুলি করতে পিস্তল বের করেন। তখন এলাকার লোকজন এগিয়ে গিয়ে তার পিস্তল কেড়ে নেন। এ ঘটনার পর আশরাফুল এলাকার লোকজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এসআই আশরাফুল এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী মো. রাজাকে জমি দেবেন বলে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন ৮ মাস আগে। জালাল  নামের আরেক ব্যক্তির কাছ থেকেও জমি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের জমি দেননি। জমির রেজিস্ট্রি চাইলে এ দুজনকে একাধিকবার পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছেন এসআই আশরাফুল। এছাড়া তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, পুলিশে চাকরি নিয়ে দেওয়ার নামেও টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আছে আশরাফুলের বিরুদ্ধে। তিনি আরএমপির কাশিয়াডাঙ্গা থানার গাড়িচালক আসাদ ও কনস্টেবল মাসুদ এবং বদরুলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন তাদের আত্মীয়কে পুলিশে চাকরি নিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে।
এই তিন পুলিশ সদস্য এখন টাকা ফেরত পেতে হন্য হয়ে ঘুরছেন। এসআই আশরাফুলের অপকর্মে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
এসআই আশরাফুল বিভিন্ন সময় মামলা ছাড়াই নিরীহ লোকজনকে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। মিজানুর বলেছেন, গত ডিসেম্বর মাসে আশরাফুল তার ভাই মো. সেলিমকে তুলে নিয়ে যান। সেলিমের নামে কোন মামলা কিংবা অভিযোগ ছিল না। আশরাফুল তাকে নাশকতার মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান। পরে এসআই আশরাফুলকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ডিবি অফিস থেকে ছাড়া পান সেলিম।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এসআই আশরাফুল এলাকায় মাদক সেবন করে বিভিন্ন সময় মাতলামি করে থাকেন। এ নিয়ে তিনি এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন বিভিন্ন সময়। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি এলাকায় বিবাদমান জমি কখনও নামমাত্র মূল্যে কেনেন আবার কখনও কখনও জোরপূর্বক দখল করেন। এসব জমিতে তিনি যখন যান, তখন কোমরে পিস্তল বের করে রাখেন। ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না। দখল করা জমিতে আশরাফুল অস্থায়ী কয়েকটা স্থাপনা তোলেন। এরপর এসব জমি বিক্রি করে দেন। এসআই আশরাফুলের এসব অপকর্ম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে এসআই আশরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এলাকাবাসী এসআই আশরাফুলের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পর আমাকেই ফোন করেছিলেন। আমিই সেনা সদস্যদের পাঠিয়ে পিস্তলটি উদ্ধার করেছি। এই এসআইয়ের বিরুদ্ধে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করব। পাশাপাশি এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনের যা যা করার আছে তা আমি করব।’
স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর