রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নাশকতার ২২৮ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন

Paris
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার এবং পরে শেখ হাসিনা সরকার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া ২২৮টি ‘নাশকতার’ মামলায় ৩ হাজার ৫৬ জন আসামির অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। সম্প্রতি আদালতে দাখিল হওয়া ওই সব প্রতিবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট (সিএমএম) আদালত গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছেন।

আন্দোলনে সময় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা ৩১ আগস্টের (গতকাল শনিবার) মধ্যেই প্রত্যাহার করা হবে- এ কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। গত ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী মামলাগুলোয় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো বলে জানা গেছে।

অব্যাহতিপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও জহির উদ্দিন স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ আসীম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও কর্মপরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থসহ গ্রেপ্তার ছাত্রজনতাসহ সব আসামি।

আদালতের প্রসিকিউশন পুলিশ সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীতে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, চুরি, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২৯০টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলোর মধ্যে ৬২টি হত্যা মামলা। এগুলো বাদ দিয়ে বাকি ২২৮টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেন দিয়েছেন পুলিশ। সেসব মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গ্রেপ্তার ও এজাহারে নাম থাকা ৩ হাজার ৫৬ জন আসামির অব্যাহতি চেয়েছিল পুলিশ।

মামলাগুলোয় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, মামলার তদন্তে ঘটনার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নাশকতার ঘটনাসমূহ অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী কর্তৃক সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করা হবে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনগুলো গ্রহণ করে আদালত আদেশে বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে ভবিষ্যতে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামিদের সন্ধানসহ নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হবে। তাই আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

চূড়ান্ত প্রতিবেদন হওয়া রাজধানীর ৫০টি থানার মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশের রমনা বিভাগের ৪২টি মামলায় গ্রেপ্তার আসামি ১৮২ জন, লালবাগ বিভাগে ১৭টি মামলায় ১৪১ জন, মতিঝিল বিভাগের ৪০টি মামলায় ৪২৩ জন, ওয়ারী বিভাগের ৫৫টি মামলায় ৬৪৫ জন, তেজগাঁও বিভাগের ৩৩টি মামলায় ৩৫৭ জন, মিরপুর বিভাগের ২৬টি মামলায় ৪৮৫ জন, উত্তরা বিভাগের ৩১টি মামলায় ৩০৬ জন এবং গুলশান বিভাগের ৪২টি মামলায় ৪১৯ জন আসামি ছিলেন।

মামলাগুলোর মধ্যে বনানীর সেতু ভবনে নাশকতা, মেট্রোরেলে নাশকতা, রামপুরার বিটিভি ভবনে নাশকতার মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল অগ্নিসংযোগের ৩ মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরসহ ৪৭ জন।

মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ওই তিন মামলা দায়ের করা হয়। কাফরুল থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান মুন্সি ১৪ আসামিকে, মিরপুর মডেল থানার এক মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক মো. মতলুবর রহমান ১৩ আসামি এবং অপর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম ২০ আসামির অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মামলাগুলোর মধ্যে গত ২৮ জুলাই কাফরুল থানার কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে নাশকতার মামলায় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ ৮ জনের ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। গত ১ আগস্ট রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গত ৬ আগস্ট তারা জামিনে কারামুক্ত হন।

গত ২২ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট নাশকতার ২২৮ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনকোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬ এর উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা ছয় হাজার জনকে আসামি করেন। কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের কাফরুল থানার আওতাধীন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ করেন। পরে গত ২৩ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মো. গোলাম রসূল আজাদ বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের মিরপুর থানার আওতাধীন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে গত ২৪ জুলাই উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের এডিসি (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ফখরুজ্জামান জুয়েল বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালে ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২৯০টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলোর মধ্যে ৬২টি মামলা হত্যা মামলা। হত্যা মামলাগুলো রেখে বাকি ২২৮ মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছিল, যা আদালত গ্রহণ করায় আসামিরা অব্যাহতি পেয়েছেন।

বিএনপির আইনবিষয়ক সহসম্পাদক ও নিম্ন আদালতে বিএনপির পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় হওয়া নাশকতার মামলাগুলোয় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানসহ দলের নেতাকর্মীরা অব্যাহতি পেয়েছেন।

সর্বশেষ - আইন আদালত