নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেড়িবাঁধের ছয়টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের একটি অংশ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। বন্যার পানিতে বিস্তৃন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্রসহ আরো অনেক কিছু ডুবে গেছে। এখন গবাদিপশু নিয়ে কেউ উচু স্থানে, কেউ বা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনপার করছে। রান্নার চুলা ডুবে যাওয়ার খাওয়ার মতো কোন ব্যবস্থা নেই বন্যা কবলিতদের। এখন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। খাবারের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জরুরী প্রয়োজনে একবুক পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সাপ-পোকামাকড়ে আতঙ্ক রয়েছেন তারা। বর্তমানে নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যহৃত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ভেঙ্ড়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় রয়েছেন নদীর পাড়ের বাসীন্দার।
আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন- গত চারদিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাটু পানি। চারদিন থেকে পানিবন্দি অবস্থা। গরু-ছাগল, মুরগি সহ এখন বেড়িবাধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদিপশুর খাবার সংকট। খাবার এবং সুপেয় পানির চরম সংকটে পড়েছি। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।
একই গ্রামে গৃহবধু নিলুফা বেগম বলেন- বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাতযাপন করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পর পর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়তে হয়।
নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন- আত্রাই নদীতে পানি প্রচুর চাপ। বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের সড়কে পানি যেতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষা চেষ্টা করেছিলাম। বেলা ১১টার দিকে অবশেষে ভেঙে যায়। এ রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে ধ্বসে যায়। এতে প্রায় ৬০ টি পুকুর কয়েকটি গ্রামে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমির আমন ক্ষেত তলিয়ে যায়। পুকুর ভেসে যাওয়ায় প্রায় চার লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এখন এ সড়ক দিয়ে কেউ আর যাতায়াত করতে পারছে না।
নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্থ স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।ভাঙন স্থানে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিতদের মাঝে ইতোমধ্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যঅনুযায়ী- বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের ক্ষেত নিমজ্জ্বিত হয়েছে। তবে কি পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে তা এখনো নিরুপন করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।