বুধবার , ১০ আগস্ট ২০১৬ | ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

দলের শোকজ চিঠিতে সেই মাহাতাবের আক্রোশ এবার সাংবাদিকদের ওপর: ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভ

Paris
আগস্ট ১০, ২০১৬ ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কি করেননি তিনি? কৈশরে ছিলেন বাসের হেল্পার। এরপর ধীরে ধীরে গড়তে থাকেন বাসস্ট্যান্ডে নিজের সম্রাজ্য। এখন হয়েছেন কোটিপতি। আলিশান গাড়ী-বাড়ির মালিক। বাস্ট্যান্ডের একাধিক জায়গারও মালিক। হয়েছেন মাহাতাব হোসেন থেকে মাহাতাব হোসের চৌধুরী।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও হয়েছেন সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এখন আশে-পাশে তার কিছু সাঙ্গ-পাঙ্গও ঘুরপাক খায়। যাদের না হলে চলতে পারেন না তিনি। আবার রাজশাহী বাসস্ট্যান্ড মানেই তার নাম। সঙ্গে বিতর্কেরও ছড়াছড়ি।

  • তবে এতকিছু না থাকার গল্পটা খুব বেশি দিনের নয়, তত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল ও তার আগ পর্যন্ত মাহাতাবের তেমন কোনো পরিচয় ছিল না। তবে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শ্রমিক নেতা বনে গিয়ে রাতা রাতি গোটা রাজশাহী বাস্ট্যান্ডের দখল চলে যায় তার হাতে।

এরপর থেকেই তিনি হয়ে উঠেন মাহাতাব থেকে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। সঙ্গে বিশাল ক্ষমতাধরও তিনি। যার কথায় উঠেন-বসেন রাজশাহীর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

যিনি এখন রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আবার মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদকও বটে। এই ক্ষমতার দাপটে মাহাতাব এখন কিছু কুচক্রি মহলের ইন্ধনে নেমেছেন রাজশাহীর সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ চেষ্টায়।

তবে তার নানা অপকর্মের বিষয়গুলো এখনো বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক উঠে আসছে। এসব কারণে গত ৩০ জুলাই তাকে মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে শোকজও করা হয়েছে। তাকে কেন স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিস্কার করা হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে ওই শোকজ নোটিশে।

  • মাহাতাবের ঘনিষ্টজনরা সিল্কসিটি নিউজকে জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মাহাতাবের নামের পাশে চৌধুরী যুক্ত হবার পাশাপাশি তিনি শুধু একাই ক্ষমতাধর হয়ে উঠেননি। তিনি সঙ্গে পেয়ে যান আরেক ক্ষমতাধর শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন রবি। যার দাপটে অতিষ্ঠ গোটা উত্তরাঞ্চলের মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা।

এই দুই নেতা নিজেদের একক ক্ষমতা বলে রাজশাহী বাস্ট্যান্ডের সব বাস নিয়ন্ত্রণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মোদ্দা কথায় তাদের ইশারায় বাস চলে, তাদের ইশারায় বাস বন্ধ হয়। নিজেদের ক্ষমতার দাপট দিখেয়ে তারা নিজেদের বাস রাস্তায় নামালেও অন্য জেলাতে গিয়ে চাঁদা দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

আবার অন্য জেলার বাস রাজশাহীতে ঢুকলে জোর করে তারা চাঁদা আদায় করেন বলে গত ২৭ জুলাই নাটোরে সংবাদ সম্মেলন করে সেখানকার মিনি বাস মালিক সমিতির পক্ষ খেকে অভিযোগ করা হয়। অবৈধ চাঁদা না দেওয়ার কারণে গত ২৬ জুলাই থেকে নাটোরের কোনো গাড়ী রাজশাহীতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আবার রাজশাহীর কোনো গাড়ীও নাটোর হয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় যেতে পারেনি।

  • এই অবস্থায় ধর্মঘট ডাকেন রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাহাতাব-রবি। জনসাধারণের মাঝে দুর্ভোগ নেমে আসা ধর্মঘট চলে টানা দুই দিন। প্রশাস ও আওয়ামী লীগের চাপে পরের দিন ২৭ জুলাই বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন মাহাতাব। 

নাটোরের ওই সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, মাহাতাব-রবির দাপটে অতিষ্ঠ নাটোরের বাসমালিক সদস্যরা। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহবান জানান হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে।

মাহাতাব-রবির ব্যক্তি স্বার্থে বাস ধর্মঘটের নামে জনগণের সঙ্গে তামাশা নিয়ে সিল্কসিটিনিউজ, দৈনিক কালের কণ্ঠ, সকালের খবরসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়।

এরপর গত ৩০ জুলাই মাহাতাবকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে শোকজ করা হয়।

  • দলীয় সূত্র মতে, শ্রমিক নেতা ও দলীয় ক্ষমতার আড়ালে মাহাতাবের নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়েই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে শোকজ করা হয়। এমনকি কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে না-তা জানতে চেয়ে তাকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। 

এরপর দল থেকে কোণঠাসা হয়ে কিছু অতি উৎসাহীদের প্ররোচণায় মাহাতাব এবার নেমে পড়েন সিল্কসিটি নিউজ’সহ আরো একটি অনলাইনেরর বিপক্ষে। তার নানা অপরাধ নিয়ে সিল্কসিটি নিউজে খবর প্রকাশ হওয়ায় তিনি উত্তরাঞ্চলের জনপ্রিয় এই সাইটটির বিপক্ষে এখন নানাভাবে অপপ্রচারে নেমেছেন।  তিনি মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। সঙ্গে নানাভাবে বিষদগার করেন মাহাতাব। তবে এর কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ তিনি দেখাতে পারেননি।

মাহাতাবের এমন কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘কাউন্সিলর মাহাতাব এখন আর নিজপথে নাই। সে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের কারণে এখন নানাভাবে বিতর্কিত। তাকে এসব পথ থেকে দ্রুত ফিরে আসতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দল থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারও করা হবে। যেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কাউন্সিলর ও শ্রমিক নেতা মাহাতাব আর বাস ধর্মঘটের নামে জনদুর্ভোগসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে না পারেন-যোগ করে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ ওই নেতা।

মাহাতাবের এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ রাজশাহীর সাংবাদিক মহল। তারা মনে করছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করতে কিছু কুচক্রি মহলের প্ররোচণায় কাউন্সিলর মাহাতাব সিল্কসিটিনিউজের বিপক্ষে এখন অপপ্রচারে নেমেছেন।

  • জানতে চাইলে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী সাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘মাহাতাবের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হতে পারেন। এ নিয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন, বা সাংবাদিকদের জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি যেটি করেছেন, তা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার এমন কাণ্ড মেনে নেয়াও যায় না। আমরা মাহাতাবের এমন কাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সঙ্গে মাহাতাবের এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রাজশাহীর সাংবাদিকরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে বলেও তারা ঘোষণা দেন।’

অন্যদিকে রাজশাহীতে বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরাও মাহাতাবের এমন কাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা ফেসবুক, মোবাইল ফোন এবং ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে কাউন্সিলর মাহাতাব এবং কামাল হোসেন রবির এমন ধৃষ্টতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করে তারা ওই দুই নামধারী শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, মেলার নামে রাজশাহীতে জুয়ার আসর বসিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য, বাসস্ট্যান্ডে জুয়ার আসর বসিয়ে বাণিজ্য, বাসস্ট্যান্ড দখল, জুয়াড়ি ও মাদকসেবিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে পুলিশের হাতে লাঞ্চিত হয়ে বাস ধর্মঘট ডেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা, কবরস্থানের গাছ কেটে লোপাট করাসহ কাউন্সিলর মাহাতাবের বিরুদ্ধে সিল্কসিটি নিউজ, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, প্রথম আলো, সকালের খবরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক খবর প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেনি কাউন্সিলর মাহাতাবের দাপট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর মাহাতাবের সঙ্গে থাকা তার সাঙ্গ-পাঙ্গরাই তাকে একের পর এক ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই তিনি এখন দল থেকেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের স্বার্থ পূরণ করার জন্যেই মাহাতাবের প্রভাব ও দাপট কাজে লাগিয়ে রাজশাহী বাস্ট্যান্ডকেও একটি অপরাধের ঘাটি বানিয়েছেন।

 

স/আর

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর