সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
শুক্রবার (২২ জুলাই) দিনগত রাত ঠিক সাড়ে ১২টা। আমেরিকান দূতাবাস ও কানাডিয়ান হাইকমিশনের পাশের সড়ক দিয়ে সাদা রংয়ের একটি পাজারো প্রবেশ করছিলো গুলশান ২ নং সার্কেলের দিকে। নতুন বাজার চেকপোস্টে গাড়িটি আটকে দেন পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
ড্রাইভিং সিটে থাকা ব্যক্তি গাড়ির ভেতরের লাইট জ্বালিয়ে দেন। পাশে বসা মহিলাটি নামিয়ে দেন জানালার গ্লাস। কোলে থাকা ছোট্ট শিশুটি উন্মুক্ত জানালা দিয়ে তাকায় পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়নের সদস্যদের দিকে।
গাড়ির পেছনের ক্যারিয়ার স্পেস চেক না করেই টর্চলাইট দিয়ে গাড়ির ভেতরটা ভালো করে দেখে প্রবেশের ইঙ্গিত দেয় পুলিশ। ভেতরের লাইটগুলো বন্ধ করে গাড়িটি এগিয়ে যায় গুলশান ২ নং সার্কেলের দিকে।
রাত দেড়টা। গুলশান ১ নং সার্কেলের শুটিংক্লাব সংলগ্ন চেকপোস্ট দিয়ে লাল রংয়ের একটি প্রাইভেটকার প্রবেশ করছিল গুলশান-বারিধারার কূটনীতিপাড়ার দিকে। এখানেও আর্মড ব্যাটালিয়নও পুলিশ সদস্যরা গাড়িটি চেক করার জন্য আটকে দেন।
যথারীতি চালকের আসনে থাকা লোকটি গাড়ির ভেতরের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেন। পাশে বসা ১০/১১ বছরের একটি ছেলে জানালার ফাঁক দিয়ে কথা বলে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে। গন্তব্য এবং এতো রাতে কোথা থেকে আসা হলো-তা শোনার পর গাড়িটিকে যাওয়ার জন্য বলা হয়।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর অনেকেই হয়তো মনে করেছিলেন গুলশান-বনানী-বারিধারায় মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিকভাবেই সীমিত হয়ে পড়বে। পারত পক্ষে সন্ধ্যার পর কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। আর গভীর রাতে তো কথাই নেই!
কিন্তু বাঙালি ‘জ্বলে-পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’। কতিপয় পথভ্রষ্ট মানুষের কাছে ১৬ কোটি বাঙালি মাথা নত করবে না। তাই তো রাত দুপুরে প্রিয় সন্তান, স্ত্রী-পুত্র-পরিবার নিয়ে ঘরে ফিরছিলেন ওই সাদা পাজারো ও লাল প্রাইভেটকারের আরোহীরা।
কথা হয় গুলশান ১ নং সার্কেলে শুটিংক্লাব সংলগ্ন চেকপোস্টে কর্তব্য পালনরত গুলশানা থানার এএসআই নুরুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দেখতেই তো পারছেন, সব কিছু স্বাভাবিক আছে। আগেও যে সংখ্যক গাড়ি ও লোকজন এ পথ দিয়ে যাতায়াত করতো, এখনো তাই। মানুষের মধ্যে খুব বেশি আতঙ্ক থাকলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গভীর রাতে এভাবে চলাচল করতো না।
প্রায় একই কথা বলেন, নতুন বাজার চেকপোস্টে কর্তব্য পালনরত গুলশান থানার এসআই হুমায়ূন কবীর। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গুলশান-বারিধারায় যারা বসবাস করেন, তারা আগের মতই চলাফেরা করছেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সবরকম ব্যবস্থাই তো নেওয়া হয়েছে। আপনারা একটু ঘোরাঘুরি করলেই সব নিজ চোখে দেখতে পারবেন।
শুধু আর্মড ব্যাটালিয়ান আর পুলিশ সদস্য নয়, গুলশান-বারিধারা-বনানীর কূটনীতিপাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে মোতায়েন রয়েছে ২ প্লাটুন (৪০ জন) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য।
রাত পৌনে ১টার দিকে গুলশান ২ নং সার্কেলের ডিসিসি মার্কেটের সামনে টহল দিতে দেখা যায় বিজিবি সদস্যদের। এক সদস্য বলেন, কূটনীতিপাড়ার নিরাপত্তা বিধানে আগে থেকেই এখানে বিজিবি টহল ছিল। এখন একটু বেড়েছে।
এদিকে গুলশান হামলার পর কূটনীতিপাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন বেড়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। দায়িত্বপালনরত পুলিশ সদস্যরা জানালেন, আগে গাড়ি চেক করতে গেলে একটুতেই মানুষ বিরক্ত হতো। এখন আর হন না। বরং ভালো করে চেক না করলে মানুষ আরো প্রশ্ন তোলেন-কেন চেক না করেই ছেড়ে দিলাম।
সূত্র: বাংলা নিউজ