সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
চারদিকে অথই পানি। ছোট একটি নৌকায় চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন শিবানী হালদার। স্বামী মঙ্গল হালদার ব্যস্ত ছোট্ট দুই শিশুকন্যা নিয়ে। দিন-রাত সব সময়ই তাদের চোখে চোখে রাখতে হয়। কারণ চতুর্দিকে বন্যার পানি। যেকোনো সময় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে।
মঙ্গলের নিজ ভিটা মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে নৌকাতে সংসার পেতেছেন।
মঙ্গল হালদার জানান, বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় কোনো উপায় না পেয়ে নৌকায় তিনি সংসার পেতেছেন। ছোট একটি নৌকার মধ্যে স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাননি তারা। তাদের মতো আরো অনেক পরিবারই নৌকায় ঠাঁই নিয়েছে। কেউ কেউ ঘরের চালায় আবার কারো ঠাঁই হয়েছে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে।
সপ্তাহ খানেক ধরে দেশের প্রধান নদী মানিকগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া পদ্মা-যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে এর শাখানদী ইছামতী, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলার ৬৫ ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৩০টি ইউনিয়নই এখন বন্যাকবলিত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। বন্যার কারণে ৩০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বন্যায় তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির বোনা আমন, রোপা আমন ও বীজতলা। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাবার, জ্বালানি লাকড়ি, গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর প্রবল স্রোতে ভাঙনের কবলে পড়েছে সহস্রাধিক বাড়িঘর, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। হুমকির মুখে রয়েছে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট।
তবে, বন্যাদুর্গত বেশ কয়েকটি এলাকার চেয়ারম্যান ও বন্যাকবলিতরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এখনো কোনো সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। শিবালয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার (জিআর) রিমন শিকদার জানান, যমুনা নদীর এ পয়েন্টে সপ্তাহ খানেক ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার (৯.৪০ মিটার) পৌঁছে। বুধবার ১৪ সেন্টিমিটার, বৃহস্পতিবার ১৬ সেন্টিমিটার, শুক্রবার ১৪ সেন্টিমিটার, শনিবার ১০ সেন্টিমিটার ও রোববার আরো ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। এরপর সোমবার সকাল নয়টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পেয়ে ৯ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটারে নেমেছে। প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর এই পয়েন্টে পানির স্তর পরিমাপ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে, মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখা সময় পর্যন্ত নদীর পানি পূর্বের অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি আরো জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, জেলার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। প্রথম পর্যায়ে দুর্গতদের মধ্যে নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৭৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরে আরো নগদ পাঁচ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত রোববার থেকে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ছয়টি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র: রাইজিংবিডি