সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
জেরুজালেমে ইসরায়েলি কনস্যুলেটের বাইরের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে ডাকা হয়, দেজা ভ্যু। ‘দেজা ভ্যু’ মানে প্রথমবারের মতো কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলেও ঘটনাটি আগেও ঘটেছে বলে বিভ্রম হওয়া।
কনস্যুলেটের সেই নিরাপত্তা বেষ্টনীর অপর পাশে গোটা ইসরায়েল ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য অধীর অপেক্ষায়।
“(ট্রাম্পের জয়ে) আমি ভীষণ আনন্দিত,” বলছিলেন রাফায়েল শোর নামে একজন রাবাই। জেরুজালেমের ওল্ড সিটির বাসিন্দা মি. শোর এর মতে, “তিনি (ট্রাম্প) মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা বোঝেন।”
“ইরান এখন কিছু করার আগে দু’বার ভাববে। কমালা নির্বাচিত হলে আমেরিকা বা ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ করতে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলোর অতটা ভয় কাজ করতো না বলে আমার মনে হয়,” যোগ করেন তিনি।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানানোর তালিকায় প্রথমদিকের একজন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
“ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনে অভিনন্দন!” – টুইটে লেখেন তিনি।
এর আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে “হোয়াইট হাউজে এযাবৎকালে ইসরায়েলের সর্বোত্তম বন্ধু” বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প তার আগের মেয়াদে যে কয়েকটি কারণে ইসরায়েলিদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তার অন্যতম, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল। ইসরায়েল আগে থেকেই ওই চুক্তির ব্যাপক বিরোধিতা করে আসছিল।
কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেন মি. ট্রাম্প।
এছাড়া, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিগত অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতৈক্যকে পাশ কাটিয়ে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
ইসরায়েল প্রশ্নে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ ‘দৃষ্টান্তমূলক’ বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন।
“আশা করা যায়, তিনি আবারও সেই পথে হাঁটবেন। (কিন্তু) ডোনাল্ড ট্রাম্প কে এবং তার অবস্থান কী, সে ব্যাপারে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
মি. ওরেন বলেন, প্রথমত, বিপুল অর্থ খরচ হয় বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট “যুদ্ধ পছন্দ করেন না”। ট্রাম্প দ্রুত গাজা যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন ইসরায়েলকে।
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের ব্যাপারেও তার আপত্তি আছে। বসতির পরিসর আরো বাড়াতে ইসরায়েলি নেতাদের কারো কারো যে ইচ্ছা, সেটিরও বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্প।
দুইটি নীতিই নেতানিয়াহুর জোট সরকারের শরিকদের বিপক্ষে যায়।
তারা ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেবে।
নেতানিয়াহুকে তার মার্কিন মিত্রের সাম্প্রতিক দাবি আর জোট শরিকদের দাবির মধ্য থেকে বেছে নিতে হলে তার শরিকদের দিকে ঝুঁকে যেতে হচ্ছে।
এর ফলশ্রুতিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার দূরত্ব দেখা গেছে।
মাইকেল ওরেন মনে করেন, ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের বেলায় নেতানিয়াহুকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোতে হবে।
“যদি জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনাকে এক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধের ইতি টানতে হবে,’ সেটার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে তাকে।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাথে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠা গাজায়ও এই একটিই চাওয়া এখন।
কথা হচ্ছিল আহমেদের সঙ্গে। যুদ্ধে তার স্ত্রী ও ছেলে নিহত হয়েছেন, বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
ট্রাম্প “দৃঢ় অঙ্গীকার” করেছেন উল্লেখ করে আহমেদ বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা তার সহায়তায় শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে।”
“অনেক হয়েছে, আমরা ক্লান্ত,” যোগ করেন তিনি।
বলেন, “ট্রাম্প শক্ত মানুষ, আশা করি তিনি ইসরায়েলের সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন।”
ট্রাম্পের জয় মানে শীঘ্রই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে, বলছিলেন মোহাম্মেদ দাউদ। গাজা সংঘাতে আটবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তিনি।
গাজার আরেক বাস্তুুচ্যুত বাসিন্দা মামদুহ বলেন, কে জিতল তা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। তিনি চান কেউ একজন এগিয়ে আসুক।
“ওষুধ নেই, হাসপাতাল নেই, খাবার নেই। গাজায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই,” বলেন তিনি।
“আমরা চাই শক্তিশালী কেউ আসুক যে আমাদের এবং ইহুদিদের এখান থেকে আলাদা করতে পারবে।”
দখলকৃত পশ্চিমতীরে আমেরিকার প্রভাব নিয়ে ব্যাপক সংশয় বিরাজ করছে। পশ্চিম তীর প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ) এর নিয়ন্ত্রণাধীন।
সেখানকার অনেকের ধারণা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনই ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বন করে।
পিএ’র প্রধান অংশীদার ফাতাহ’র জ্যেষ্ঠ নেতা সাবরি সাইদামের মতে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের ওপর দিয়ে অথবা ইসরায়েলকে নিরন্তর সামরিক সহায়তার মধ্য দিয়ে কোনো রকম একটা সমাধানের চেষ্টা হলে সেটি সংকট আরো বাড়াবে।
“আমরা একটা নতুন ট্রাম্পকে দেখতে চাই, অনেকটা ট্রাম্প টু পয়েন্ট ও, যিনি মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের মূল কারণের দিকে নজর দেবেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক হবেন।
সাম্প্রতিক জরিপগুলো থেকে জানা যায়, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইসরায়েলি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরার প্রত্যাশায় ছিলেন। কিন্তু, তার অনিশ্চয়তায় ভরা ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে সতর্ক চোখ রাখা লোকেরও অভাব নেই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা