রবিবার , ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১১ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ট্রাকের চেয়ে পরিবহণ ব্যয় বেশি ট্রেনে: কৃষিপণ্য নিতে অনাগ্রহী ব্যবসায়ীরা

Paris
অক্টোবর ২৭, ২০২৪ ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাগঞ্জে প্রথম দিনে কোন কৃষিপণ্য ছাড়াই ছেড়ে গেছে কৃষিপণ্যবাহী বিশেষ ট্রেন। কম খরচে কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে গতকাল শনিবার থেকে নতুন করে চালু হয় এ ট্রেনটি। বেলা এগারটা ৪০ মিনিটে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রেনে কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে উল্টা খরচ বাড়বে। ফলে তাদের অনাগ্রহের কারণে এই ট্রেনটিতে কোনো কৃষি পণ্য পরিবহন করা হয়নি। অন্যদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, স্পেশালভাবে কৃষি পণ্যবাহী ট্রেন না দিয়ে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কৃষি পণ্যবাহী বা লাগেজবাহী বগি রাখতে হবে। তাতে যাত্রীরা ওই লাগেজ বগিতে বড় বড় লাগেজ এবং কৃষি পণ্য নিয়ে যেতে পারবেন ঢাকায়। তখন এটি ধিরে ধিরে জনপ্রিয় হবে।

রেলের দায়িত্বরতরা জানান, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে কৃষিপণ্যেবাহী ট্রেনটি। পরে রাজশাহী রেল স্টেশনে এসে পৌঁছায় সোয়া এগারটায়। তবে রাজশাহী পর্যন্ত ৫টি স্টেশনে সবজি নেয়ার জন্য থামলেও কোনো প্রকার সবজি উঠায়নি কেউ। তবে কিছু মুরগির ডিমের খাঁচি নেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষিপণ্য না থাকায় এই বিশেষ এই ট্রেনটি খালি যেতে দেখা গেছে। প্রতিদিন পণ্যবাহী এ ট্রেনের ৫ টি বগির মধ্যে ১২০ টন পণ্য আনা-নেয়ার সুবিধা থাকবে।  কেজি প্রতি সবজি বা কৃষিপণ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ টাকা ৩০ পয়সা এবং রাজশাহী থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ১৮ পয়সা পড়বে ঢাকায় পৌঁছানোর খরচ।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের সবজি ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনসহ আরও অনেকে জানান, একটি মাঝারি ট্রাকে ১৫ থেকে ১৬ টন মালামাল (কৃষিপণ্য) ঢাকায় পরিবহন করা যায়। তাতে ভাড়া পরে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। ট্রেনের যে ভাড়া তাতে ১৫ টন মালামাল ঢাকায় পাঠাতে শুধু ট্রেন ভাড়ায় লাগবে কমপক্ষে ১৭ হাজার টাকা।

আবার বাজার থেকে মালামাল কিনে ট্রাকে করে সেটি সরাসরি ঢাকার মোকামে বা আড়তে পৌঁছানো যায়। কিন্তু ট্রেনে পাঠাতে হলে বাজার থেকে কিনে আগে স্টেশনে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে মালামাল বুকিং করতে হবে। এরপর ট্রেনে তুলে দিয়ে ঢাকার কোনো স্টেশরে নামিয়ে সেই মালামাল আবার আড়তে পৌঁছাতে হবে। এতে করে একই কৃষিপণ্য রাস্তাতেই দুই জায়গায় নামানো উঠানো করতে দুই জায়গাতেই শ্রমিককে টাকা দিতে হবে। আবার একই মালামাল মাঝপথে দুই জায়গায় উঠানো নামানো করতে গিয়ে মাণ খারাপ যেমন হবে, তেমনি দুই স্টেশনে পৌঁছানো এবং নিয়ে যাওয়া বাবদ বাড়তি ট্রাক বা পরিবহণ ভাড়া লাগবে। ফলে ট্রেনে করে কৃষি পণ্য পরিবহন করতে বেশি খরচ হবে। এই চিন্তা থেকে আমরা ট্রেনে আগ্রহ দেখাবো না। এর আগে আম পরিবহন করতে গিয়েও এভাবে সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। যার কারণে এখন আমও ট্রেনে তেমন যায় না।’


পবার ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, কোনো স্টেশনের কাছেই সবজি বাজার বসে না। ফলে সবজি বা কৃষি পণ্য কিনতে হলে গ্রামের বাজারগুলো থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কৃষিপণ্য সাধারণত অতি নরম জাতের মালামাল হয়। এসব মালামাল উঠানামা করতে হয় সাবধানে। কিন্তু ট্রেনে পরিবহন করতে গেলে রাস্তাতে আরও দুইবার উঠানো নামানো করতে হবে। তাতে কৃষিপণ্যের মাণ খারাপ হয়ে যাবে। যেসব ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনে ঢাকায় পাঠাবেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সে কারণেই ট্রেনে কৃষি পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, সবজি ব্যবসায়ীরা সাধারণত মন কে মন মালামাল কিনে সরাসরি ঢাকায় পাঠান। ট্রেনে পাঠাতে হলে এত মালামাল বার বার উঠানো নামানো করা, আমাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আবার খরচ ও অতিরিক্ত হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘এক ট্রাক মালামাল পাঠাতে যেখানে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে এভাবে ট্রেনে পাঠাতে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। কারণ রাস্তা পথেয় এই ৩০ হাজার টাকার অর্ধেক খরচ হয়ে যাবে। এসব চিন্তা মাথায় রেখে আমরা সরাসরি ট্রাকেই মালামাল কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

কৃষি পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেনের বগি এভাবেই সাজানো হয়েছে

এদিকে সনাক রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু স্টেশনের কাছে বাজার বসে না, সে তো কৃষি পণ্যবাহী স্পেশাল ট্রেন দেয়ার কোন মানেই হয় না। তবে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে লাগেজ ভ্যান দেয়া উচিত। তাতে মানুষ সব ধরনের পণ্য ওই লাগেজ ভ্যানে পরিবহন করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, বড় বড় লাগেজ পরিবহন করা যাবে লাগেজ ভ্যানে। যেসব যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করবেন তারাই সাধারণত পণ্য পরিবহন করতে উৎসাহিত হবেন। তাতে রেলের আয়ও বাড়বে। কিন্তু স্পেশাল ভাবে ম্যাংগো ট্রেন বা কৃষি পণ্যবাহী ট্রেন দিয়ে কখনো লাভ হবে না। যতক্ষণ না স্টেশনের সামনে বড় বড় বাজার বসানো না যাবে।’

বানেশ্বর বাজারের আজগর আলী বলেন, আমাদের দেশের ট্রেন চলাচলের কোন ভবিষ্যৎ নাই। কখন কোন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়, কখন কোন ট্রেন থেমে যায় তার ঠিক ঠিকানা নাই। এ অবস্থায় কৃষি পণ্যবাহী ট্রেন যদি পথেই আটকে যায় বা কোনোভাবে ভোরের মধ্যে আড়তে পৌঁছাতে না পারে তাহলে সেদিন আর বিক্রি হবে না। আর ওইদিন মালামাল বিক্রি না হলে অধিকাংশই মাল নষ্ট হয়ে যাবে। এটিও অনেকটা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। এ চিন্তা মাথায় রেখেও ট্রেনে মালামাল পরিবহণ করতে আগ্রহী হচ্ছি না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের সহাকারী বাণিজ্যিক বর্মকর্তা একেএম নুরুল আলম বলেন, সপ্তাহে একদিন শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী হয়ে ১৪টি স্টেশন থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে এই কৃষি ট্রেন। তবে তবে প্রচারণা চালালেও পরিবহনে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তাই আগামীতে বিভিন্ন উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে আরও।

স.আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর